মনু নদের পাড় দিয়ে একসময় মানুষের হাঁটাচলা ছিল। এরপর বহুদিন ধরেই ছিল প্রায় পরিত্যক্ত। দখল, ঝোপঝাড়, আবর্জনা থাকায় পারতপক্ষে ও পথে কেউ আর পা বাড়ায়নি। সেই পাড়ই সাজছে সৌন্দর্যের নতুন চেহারায়। সড়ক, হাঁটার পথ, শিশুপার্ক, বনায়নের মাধ্যমে সাজানো হচ্ছে পাড়।
মৌলভীবাজার শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মনু নদের শান্তিবাগ এলাকার পাড়ে মাসখানেক আগে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। শহরবাসীর একঘেয়ে, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত সময়কে পাশ কাটিয়ে অবসর কাটানোর ক্ষেত্রে এই পাড়কে দারুণ জায়গা মনে করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এটিকে ‘নিশ্বাসের জানালা’ বলছে তারা।
মৌলভীবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনু নদের তীরেই গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজার শহর। শহরের পুরো উত্তর পাশ ছুঁয়ে মনু নদ ভাটির দিকে চলে গেছে। একসময় মনু নদের পাড় ধরে মানুষ চলাচল করেছে। এখনো শহরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচলের পাকা রাস্তা। শহরের শান্তিবাগ এলাকার মনু নদের পাড়ও হাঁটার পথ হিসেবে একসময় ব্যবহৃত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পথ হিসেবে পূর্ব পাশের মানুষ মনু সেতু থেকে পশ্চিম দিকে এবং পশ্চিম পাশের মানুষ পুরোনো থানা এলাকা থেকে পূর্ব দিকে যাতায়াত করেছে।
কিন্তু অনেক দিন ধরে পাড়টি সংস্কার না হওয়ার কারণে ঝোপঝাড় তৈরি হয়েছে। অনেকে মৌসুমি বিভিন্ন ধরনের ফসল লাগিয়েছে। কেউ কেউ অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করেছে। এতে মনু নদের শান্তিবাগ এলাকার পাড়টি সরু এবং হাঁটাচলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা থাকলেও আবর্জনা মাড়িয়ে কেউ আর ওপথে যেতে চায়নি। ফলে মনু নদের পাড়ের শান্তিবাগ অংশটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এই অবস্থায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশকে চলাচল, বিনোদন ও সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগ এলাকায় ‘মনু নদের পাড়ে সড়ক, শিশুপার্ক, হাঁটাপথ ও সৌন্দর্যকরণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে চাঁদনীঘাট মনু সেতু থেকে ডাকঘর পর্যন্ত ৮০০ মিটার আরসিসি সড়কপথ নির্মাণ করা হবে। সড়কের দুই পাশে থাকবে হাঁটাচলার পথ। থাকবে একটি ক্যানটিন। নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক দুটি শৌচাগার থাকবে। মনু নদের পাড়ের সৌন্দর্য বাড়াতে ফুল ও নানা জাতের গাছ লাগানো হবে। নদের পাড়জুড়ে লাগানো হবে বাতি। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ কোটি ১১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৫ টাকা। খান অ্যান্ড সন্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ নকীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের গাইডওয়াল (সুরক্ষাদেয়াল) তৈরি হয়েছে। সড়ক ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বুধবার শান্তিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মনু সেতু থেকে ডাকঘর এলাকা পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে। পাড়ের ওপর রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। সুরক্ষাদেয়াল তৈরি হয়েছে। রাস্তা আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। চলছে ক্যানটিন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ।
পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন সড়কের উন্নয়নকাজ প্রায় শেষ। যেগুলো বাকি আছে, তা–ও শেষ হয়ে যাবে। এখন আমরা শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের দিকে দৃষ্টি দিয়েছি। তারই অংশ হিসেবে মনু নদের তীরে শান্তিবাগ এলাকায় ৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।’
মেয়র বলেন, এখানে ছোট যানবাহন চলাচলের রাস্তা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ছোট-বড় সবার সময় কাটানোর ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ যাতে নিরাপদে হাঁটাচলা করতে পারে, সে জন্য ওয়াকওয়ে থাকবে। সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ফুলসহ বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরের সৌন্দর্য যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষ নদীর পাড়ে বসে আড্ডায় কিছুটা সময় কাটাতে পারবে।