মনুর দুঃখ লাঘবে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

শুকনো মৌসুমে মনু নদ। গত বুধবার মৌলভীবাজার শহরের কাছে
ছবি: প্রথম আলো

বর্ষায় বন্যা নিয়মমাফিক ঘটনা। পানির সঙ্গে বাড়ে দুই পারের লাখো মানুষের আতঙ্ক ও উদ্বেগ। বাদ যায় না জেলা শহরও। মনু নদের পারের বাসিন্দারা এ কষ্ট সহ্য করে দিন পার করছেন। বন্যার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও কম করেননি। এবার মনু নদকে ঘিরে প্রায় হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের ৭৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিশেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটিতে নদীর তলদেশের অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে চর জেগে উঠেছে। শুকনা মৌসুমে পানির ক্ষীণধারা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। আর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে দ্রুতই নদটি টইটম্বুর হয়ে ওঠে। মনু নদের পাড় ভাঙা ও বন্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার শহরে ভয়াবহ বন্যায় অনেক প্রাণহানি ঘটে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়।

পাউবো ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

পাউবো জানিয়েছে, ৭০টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ হবে। এতে আছে নতুন করে আড়াই কিলোমিটার বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, ৭৬৬ মিটার পুরোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল পুনর্বাসন, ৮৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসন, ৩৫ স্থানের ১২ কিলোমিটার চর অপসারণ, নদের তীর সংরক্ষণকাজ ইত্যাদি। পাউবোর প্রধান কার্যালয়ের নকশা দপ্তরে ৫৫টি প্যাকেজের নকশা অনুমোদনের জন্য পাউবো জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নকশার অনুমোদন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে মৌলভীবাজার শহর অংশের আড়াই কিলোমিটার বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে মনু নদে খনন হয়নি। চর কাটা হলে পানির স্বাভাবিক স্রোত ফিরে আসবে।

সূত্রটি আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণেরও মাঠপর্যায়ে জরিপ কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এক লাখ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ সরাসরি নদীভাঙনের ঝুঁকিমুক্ত হবে। সাড়ে চার লাখ মানুষ বাঁধ ভেঙে বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আক্তারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে মনু নদে খনন হয়নি। প্রতিবছর ছয় থেকে আট ইঞ্চি পলিমাটিতে ভরাট হচ্ছে। অন্তত ২০–২৫ ফুট ভরাট হয়ে গেছে। চর কাটা হলে পানির স্বাভাবিক স্রোত ফিরে আসবে। পাহাড়ি ঢল দ্রুত নেমে যাবে। বন্যার কবল থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।