পানের বাজারটি একটু ব্যতিক্রম। এটি আট-দশটি বাজারের মতো নয়। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটা থেকে ভোর ছয়টার মধ্যেই শেষ হয় বেচাকেনা। বাজারে আসেন অসংখ্য পাইকারি ক্রেতা ও কৃষক। এ দুদিন রাতের বেলা প্রায় ১ কোটি টাকার পানের বেচাকেনা হয়। দিনের বেলা পানগুলো সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামের বড় বাজারগুলোতে। বাজারটির নাম পুঁইছড়ি নাপোড়া বাজার। স্বাধীনতার আগ থেকে চলছে মধ্যরাতের এই পানের বাজার।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় বাজারটিতে গিয়ে দেখা গেছে পানের স্তূপ নিয়ে বসেছেন ক্রেতারা। পাইকারি বিক্রেতারা দর-কষাকষি করছেন। মধ্যরাতেও কোলাহলে মুখর বাজারটি। পানের ভার কাঁধে নিয়ে একের পর এক কৃষক ঢুকছেন বাজারে।
ইজারাদার আনিসুর রহমান বলেন, এক বছরের জন্য ২১ লাখ টাকায় বাজারটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার গভীর নাপোড়া বাজারে পানের বেচাকেনা হয়। জায়গার সংকট হওয়ায় বাঁশখালী প্রধান সড়কের ওপর বাজারটি বসে। দিনের বেলা হলে বেশ অসুবিধা হতো। তাই রাতে বসে পানের বাজারটি। প্রতি হাটের রাতে প্রায় অসংখ্য পাইকার এবং কৃষক বাজারে ভিড় করেন।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের কৃষক অজিত কান্তি দেব বলেন, তাঁর নিজের চারটি পানের বরজ রয়েছে। দিনের বেলা পান তুলে সাজিয়ে রাতের বেলা পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পান বাজারে নিয়ে আসা হয়। পানের জমজমাট বাজার এটি। দেশি পান প্রতি বিরা (৮০টি) বিক্রি হয় ২৫০–৩০০ টাকায়। মিষ্টি পান প্রতি বিরা ৪০০–৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পান আকারে বড়। মিষ্টি পান মাঝারি আকারের।
পাইকারি পানের ক্রেতা নয়ন দেব বলেন, এবার ৬ লাখ টাকার পান কিনবেন তিনি। রাতে পান কিনে দিনের বেলায় চট্টগ্রাম শহরে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। বাঁশখালীর পানের ভালো চাহিদা রয়েছে। এই দুই দিন প্রায় ১ কোটি টাকার পান বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শেয়ার আলী বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই বাজারটি চালু রয়েছে। গভীর রাতে অনেক টাকার লেনদেন হলেও গত ৪০ বছরে এই বাজারে চুরি বা ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, বাঁশখালীতে মোট ৯০ হেক্টর জায়গায় পানের চাষ হয়। পুঁইছড়ি এবং সাধনপুর ইউনিয়নে পানের চাষ বেশি হয়। শুধু পুঁইছড়ি ইউনিয়নেই ৫০ হেক্টরে পানের চাষ হয়। তিনি আরও বলেন, সারা বছর পানের চাষ হয়। তবে বর্ষাকাল বা ভারী বৃষ্টিপাত হলে পানে গাছের ডগা পচে যায়। পানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়।