মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা আরও একজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইশিবপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৫ নম্বর গাংকান্দি শাখারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ ধাপে উপজেলার ৬টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইশিবপুর ইউনিয়নে। নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মামা সালাহ উদ্দিন আহমেদ ইশিবপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
সালাহ উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারফ মোল্লা। গোলাম রাব্বানী মামার নির্বাচন উপলক্ষে রোববার সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে যান। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইশিবপুর ইউপির ৭ নম্বর ভোটকেন্দ্রে এলে তিনি কেন্দ্রের লাইনে থাকা কয়েকজন জালভোটারকে ধরেন। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারফ মোল্লা লোকজন তাঁকে ধাওয়া করে হামলা চালান। গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে থাকা এস এম টিপু হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে রাব্বানীসহ টিপুকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গোলাম রাব্বানী ও টিপুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে মোশারফ মোল্লার লোকজন প্রতিটি কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু থেকেই জালভোটসহ প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। প্রকাশ্যে ভোট কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমি নির্বাচনী কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করি। অনেক কেন্দ্রে জালভোটার ধরে পুলিশের কাছে দিই। ৭ নম্বর কেন্দ্রটি মোশারফ মোল্লার লোকজন দখল করতে চাইলে, আমি তাঁদের বাধা দিই এবং লাইনে থাকা জালভোটারদের ধরে পুলিশের কাছে দিতে যাই। তখনই মোশারফ মোল্লা নিজে এসে তাঁর নির্দেশে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। হামলায় আমার ডান হাতের একটি আঙুল গুরুতর জখম হয়েছে, আটটি সেলাই লেগেছে। তাঁরা আমার এক কর্মীকে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। আমি মোশারফ মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেব।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারফ মোল্লা বলেন, ‘গোলাম রাব্বানীর কেন্দ্র ঘুরে দেখার অনুমতি নেই। পর্যবেক্ষণ কার্ড তিনি পাননি। তবু তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করছেন। অনুমতি ছাড়া তিনি কী করে কেন্দ্রে এলেন? তিনি অনৈতিক কার্যকলাপ করতে গেলে কেন্দ্রের ভোটাররা রাব্বানীকে ধাওয়া করেন। আমার কোনো লোকজন হামলা চালাননি।’
ইশিবপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৫ নম্বর গাংকান্দি শাখারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, কেন্দ্রের ভেতর কিছুই হয়নি। বাইরে একটু ঝামেলা হয়েছিল, যা পুলিশ লাঠিপেটা করে নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. সাদিক বলেন, ‘গোলাম রাব্বানীর ওপর হামলার কথা শুনেছি। তিনি থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেন্দ্রে গোলাম রাব্বানীর ওপর হামলার খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম রাব্বানীর মামা নির্বাচন করছেন। তাই তিনি কেন্দ্রের বাইরে বাইরে অবস্থান নেন। তাঁর ওপর হামলার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ছাড়া কেন্দ্রের ভেতরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অন্যান্য কেন্দ্রের মতো এখানেও সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হয়েছে।