ভিত্তিপ্রস্তরেই কেটে গেল দেড় যুগ

২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনো তৈরি হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। গত শনিবার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে। প্রথম আলো
২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনো তৈরি হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। গত শনিবার  আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে।  প্রথম আলো

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রধান ফটকের ডান পাশে একটি ভিত্তিপ্রস্তর ফলক। অযত্ন আর ধুলা–ময়লায় মলিন। এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য ২০০১ সালে ফলকটি উন্মোচন হয়েছিল। কিন্তু এরপর দেড় যুগ পার হলেও স্মৃতিস্তম্ভটি আজও নির্মিত হয়নি।
তাই ক্যালেন্ডারের পাতা ওলটাতে ওলটাতে যখনই স্বাধীনতা দিবস বা এ রকম বিশেষ বিশেষ দিন উপস্থিত হয়, তখন উপজেলা প্রশাসন দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাঁশ–কাঠের ফ্রেমে কাপড় জড়িয়ে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে। সেখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয় এলাকাবাসীকে। এবারের স্বাধীনতা দিবসেও একই অবস্থা। আজ বাঁশ–কাঠ দিয়ে নামকাওয়াস্তে বানিয়ে দেওয়া স্মৃতিস্তম্ভেই স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে উপজেলাবাসীকে। ফলে বেশ ক্ষুব্ধ তাঁরা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের মতো আটঘরিয়া উপজেলাকে ঘিরেও রয়েছে স্বাধীনতাসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। এখানে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন বহু মুক্তিযোদ্ধা। সম্ভ্রম হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন বীরাঙ্গনা। ফলে উপজেলাবাসীর হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে শ্রদ্ধা মেশানো আবেগ রয়েছে। এই আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০১ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নেন। সে অনুযায়ী তিনি উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে সে বছর ১ আগস্ট একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বদলিজনিত কারণে তিনি আটঘরিয়া ত্যাগ করলে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপায় না পেয়ে উপজেলাবাসী কয়েক বছর বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ভিত্তিপ্রস্তরেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর গত দুই বছর উপজেলা প্রশাসন সেখানে অস্থায়ীভাবে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় এবারও বাঁশ–কাঠের ফ্রেমে কাপড় জড়িয়ে একটি অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পাবনা-চাটমোহর সড়কের পাশের একটি ফাঁকা স্থানে তৈরি হয়েছে সবুজ কাপড়ে ঘেরা অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ। কয়েকজন ডেকোরেটর শ্রমিক সাজিয়ে তুলছেন স্মৃতিস্তম্ভটিকে।
স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, আগে ভিত্তিপ্রস্তরেই ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো। এখন অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে। এটাও একপ্রকার সান্ত্বনা। এখানে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় যুবক মাসুদ রানা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়ার ছিল ঘটনাবহুল অধ্যায়। দিনে দিনে বহু নতুন ইতিহাস উন্মোচিত হচ্ছে। কিন্তু আজও একটি মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হয়নি। এটা দুঃখজনক।
মুক্তিযোদ্ধা কে এম শহীদুল আলম বলেন, ‘উপজেলায় নতুন নতুন কত স্থাপনা হয়। উপজেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের জন্য অফিসার্স ক্লাব হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির টাকা জোগাড় হয় না। এটা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও লজ্জার ব্যাপার।’
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আটঘরিয়া উপজেলা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার জহুরুল হক বলেন, ১৯৯৬ সালে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য একবার প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সে প্রকল্প বাতিল করে। এরপর উপজেলা প্রশাসন বহুবার স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য প্রকল্প জমা দিয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন হয়নি। ফলে স্মৃতিস্তম্ভও হয়নি।
এ প্রসঙ্গে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকরাম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত অর্থাভাবেই কাজটি হয়নি। তবে বর্তমানে আমরা স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। সাংসদ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগির স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে।’