ভিক্ষার বদলে গাভি উপহার

 ২৬ ভিক্ষুককে গাভি উপহার দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বর, বাগমারা, রাজশাহী, ৩ ডিসেম্বর
প্রথম আলো

বৃদ্ধ রোকেয়া বেওয়া দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে চলে তাঁর সংসার। এই কাজ ভালো না লাগলেও অভাবের তাড়নায় ছাড়তে পারেন না। এত দিন বড় ধরনের কোনো সহযোগিতাও মেলেনি তাঁর। তবে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদে ডেকে রোকেয়া বেওয়ার হাতে ভিক্ষার বদলে উপহার হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি গাভি। এমন উপহার পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। তাই আর ভিক্ষা নয়, এবার বাকি জীবন গাভি লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহের ইচ্ছা তাঁর।

৬৭ বছর বয়সী রোকেয়া বেওয়ার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভানসিপাড়া গ্রামে। শুধু রোকেয়া নন, তাঁর মতো বাগমারার আরও ২৫ জন পেয়েছেন ভিক্ষার বদলে গাভি উপহার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে এসব উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়।

বাগমারা উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় ২৬ জন ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি করে গাভি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপজেলার ২৬ জন ভিক্ষুককে গোপনে নির্বাচিত করে তাঁদের বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদে ডেকে আনা হয়। গাভি হাতে পেয়ে কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন। বয়স বিবেচনায় তাঁদের ছোট-বড় গাভি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গাভি বহন করে বাড়িতে নেওয়া ও খাবার কেনার জন্য নগদ অর্থও সহায়তা করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের উপজেলার সমন্বয়ক আজাহার আলী প্রমুখ।

ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২৬ ভিক্ষুককে গাভি উপহার দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদ চত্বর, বাগমারা, রাজশাহী, ৩ ডিসেম্বর।

গাভি উপহার পেয়ে উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের ইয়াদ আলী (৭০) আলী বলেন, ডেকে নিয়ে এভাবে গাভি উপহার দেওয়া হবে, তা তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘বাছুর হলে দুধ বিক্রি করতে পারব, আর ভিক্ষা করা লাগবে না।’

হায়াতপুর গ্রামের লেকজান বিবিও (৫১) গাভি পেয়েছেন। তিনি বলেন, লোকজনের কাছে হাতে পেতে সর্বোচ্চ ১০-২০ টাকা ও আধা কেজির মতো চাল পাওয়া যায়। এখন থেকে গাভি লালন-পালন করবেন, ভিক্ষা করবেন না।

ইউএনও শরিফ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভিক্ষুকদের গাভিগুলো দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করে উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে।