মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটে যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি না ছাড়ায় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ঘাট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে কি না, তা জানাতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।
কমিটিতে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল হককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আবির হোসেন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম (মেরিন) এ কে এম শাজাহান। তাঁদের আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় ঘাটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার চার দিন পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিতাসের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিত হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের দাবি, তাঁদের কাছে রোগীর স্বজনেরা রোগীর অবস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স ফেরিতে লোড করে ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘাট থেকে কুমিল্লা ফেরিটি শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম হোসেন বলেন, ‘ঘাটে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। পদ্মায় স্রোত বেশি থাকায় আমরা নিয়মিত ফেরি চলাতে পারছি না। এটা তো আর দায়িত্বে অবহেলার মধ্যে পড়ে না।’
এদিকে তিতাস ঘোষের বড় বোন তন্নীসা ঘোষ বলেছেন, ‘চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে অর্ধলক্ষ টাকায় ভাড়া করা হয় আইসিইউসংবলিত অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটি ঘাটে এসে থামে রাত আটটার দিকে। ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য তাঁরা ঘাট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, এমনকি জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করেও সাহায্য চান। কিন্তু কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পরে রাত পৌনে ১১ টার দিকে ভিআইপি সাদা রঙের নোয়া মাইক্রোবাসটি ফেরিতে ওঠার পরে ছাড়া হয় ফেরি। ফেরিটি ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই মাঝনদীতে মারা যায় তিতাস।’
তিতাসের মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুতে জন্য ভিআইপিকে দায়ী করে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টার দিকে নড়াইলের কালিয়া সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশ নেন। তিতাসের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন...