বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে এ এলাকা খ্যাত হলেও সড়কটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা নেই।
১৬ বছর আগে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও খুলনার রূপসা পাড়ের খেয়াঘাট আজও ‘রূপসা ফেরিঘাট’ নামেই পরিচিত। ঘাটের পশ্চিম পাড়ে খুলনা নগর আর পূর্ব পাড়ে রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়ন। শহর থেকে ঘাট পার হয়ে কয়েক মিটার এগোলেই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও বীর বিক্রম মহিবুল্লাহর সমাধি কমপ্লেক্স। ঠিক পাশ দিয়ে রূপসা সেতুর দিকে চলে যাওয়া সড়কটিও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামেই। সড়কের পাশে আছে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্তত ১৫টি কারখানা ও বরফকল, ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোস্টগার্ড কার্যালয়, পুলিশ ক্যাম্পসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বীরশ্রেষ্ঠের নামের এই সড়ক এখন বেহাল। সড়কে যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তেমনি চালাকেরাও হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। ভাঙাচোরা থাকায় প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। তবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা সড়কটি কাগজপত্রে ’ভিলেজ রোড-এ’ ক্যাটাগরির। গ্রামীণ সড়কের নকশায় তৈরি সড়কে মাছ কোম্পানির বড় গাড়ি, পাওয়ার প্ল্যান্টের ভারী যানবাহন এবং নির্মাণাধীন রূপসা রেল সেতুর অনেক যানবাহন চলে। এর বাইরে সড়কের দুপাশে ইট, বালু, খোয়া, পাথর ও কয়লা ব্যবসায়ীদের গোলা থাকায় সেগুলোতে পরিবহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝাই ভারী ট্রাক চলে। এতেই সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি রূপসা ফেরিঘাটের পূর্ব পাড় থেকে শুরু হয়ে চর রূপসা, বাগমারা হয়ে জাবুসা বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির প্রায় অর্ধেকই এখনো পুরোটাই কাঁচা। আর পাকা অংশে ২০১৭ সালের পর কোনো ধরনের কাজই হয়নি।
চর রূপসা, বাগমারা, জাবুসা এলাকার মানুষ যাতায়াতের জন্য সড়কটি ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভাঙাচোরা এ সড়কে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আর সড়কের পাশের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিককে ঝুঁকি নিয়ে এখান দিয়ে চলাচল করতে হয়। এমন দিন নেই যে এর গর্তে গাড়ি আটকায় না। হেলেদুলে চলতে গিয়ে যন্ত্রাংশ ভাঙে পণ্যবাহী যানের। বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে এ এলাকা খ্যাত হলেও সড়কটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ’ওই সড়কের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২০ টন। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত ৫০ টন মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এতে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। আবার এটি নামে ভিলেজ রোড হলেও গুরুত্ব অনেক। এখানে ছোটখাটো কোনো সংস্কারে লাভ হবে না। পুরো ভেঙে ফেলে সড়কটির ধারণক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ক্যাটাগরি আপডেট করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি।’
গত সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের ওরিয়ন পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার অংশের প্রায় পুরোটাই ভাঙাচোরা। রূপসা সেতু থেকে পাওয়ার প্ল্যান্ট পর্যন্ত প্রায় বেশ কয়েক জায়গায় নদীভাঙন আছে। সড়কের অনেক জায়গায় পিচের চিহ্নমাত্র নেই। বেরিয়ে এসেছে মাটি। প্রথম দেখায় সেগুলোকে কাঁচা রাস্তা বলে ভুল হতে পারে। ছোট ছোট অসংখ্য গর্তের পাশাপাশি আছে জায়গায় জায়গায় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও কাদাপানি জমে আছে।
মাঝেমধ্যে সুরকি দিয়ে সড়কের গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছিল। তবে বৃষ্টির কারণে ও অত্যধিক যানবাহনের চাপে সেগুলো থাকেনি। গাড়ির চাকা গর্ত এড়িয়ে চালানোর সুযোগ খুব কমই আছে। ট্রাক ও যাত্রীবাহী ভ্যান গর্তে আটকে যায়।
ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত বালু ,পাথরসহ নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়া করেন ট্রাকচালক মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, ঝাঁকুনিতে রাস্তার মধ্যে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে অন্য ট্রাক দিয়ে টেনে উঠানো লাগে। আর গাড়ি উল্টে যাওয়া, যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়া তো নিত্যদিনের ঘটনা। এলজিইডির খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সড়কটির বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সেখান থেকে মতামত পেলে সামনের দিকে এগোতে পারব।’