৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। লোকবলও নিয়োগ দেওয়া হয়।
আগুন নেভাতে ও দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৯ মাস আগে পটুয়াখালীর গলাচিপায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে স্টেশনটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। এরই মধ্যে আশপাশের এলাকায় আগুন লাগার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসেই গলাচিপা শহরে আগুনে নয়টি দোকান পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি চালু থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও কম হতো বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য দুটি অগ্নিনির্বাপণ গাড়িসহ প্রয়োজনীয় লোকবলও বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গলাচিপা স্টেশনটি চালু না হওয়ায় লোকবল অন্যত্র প্রেষণে পাঠানো হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গলাচিপায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। গাড়ি যাওয়া-আসার সড়ক না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি পৌরসভার এবং সড়ক নির্মাণে আমাদের বরাদ্দ না থাকায় বিষয়টি পৌরসভাকে জানিয়েছি।’
সড়কটি পৌরসভার এবং সড়ক নির্মাণে আমাদের বরাদ্দ না থাকায় বিষয়টি পৌরসভাকে জানিয়েছি।মো. হারুন অর রশিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ, পটুয়াখালী
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিপ্রতিরোধ, উদ্ধার, আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় কাজ করেন কর্মীরা। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলায় ১৫৬ ফায়ার প্রকল্পের আওতায় গলাচিপা উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গণপূর্ত বিভাগ পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের অক্টোবরে গলাচিপার পুরোনো লঞ্চঘাট সড়কের পাশে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু করে। স্টেশনের সীমানাপ্রাচীরসহ অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর পর থেকে স্টেশনটি বুঝে নেওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পটুয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নিজামউদ্দিন একাধিকবার অধিদপ্তরে চিঠি দেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো লঞ্চঘাট সড়কটি ক্ষতবিক্ষত। তার এক পাশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নতুন ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। ১২ ফুট চওড়া সড়কটির ৩০০ ফুট অংশ মেরামত হলেই এটি লঞ্চঘাট মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। সড়কটি গলাচিপা পৌরসভার আওতায়। তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে নতুন এই স্টেশনটি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
গলাচিপার পৌর মেয়র আহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পুরোনো রাস্তাটি নতুন করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভা থেকে সড়কটি শুরু হয়ে পুরোনো লঞ্চঘাটে শেষ হবে। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটি আরসিসি ঢালাই দিয়ে করা হবে। সঙ্গে নালা নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বরাদ্দ পেলেই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের নলুয়াবাগী এলাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অগ্নিকাণ্ডে নয়টি দোকান পুড়ে যায়।
গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন জানান, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় নিজেরাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন আগুন নেভাতে। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই নয়টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
দশমিনা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত লিডার আবদুর রশীদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁদের গলাচিপায় যেতে হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জানুয়ারি গলাচিপার সাগরদি এলাকায়, ১৭ ফেব্রুয়ারি গোডাউন সড়কে, ১৮ মার্চ ডাউকা ইউনিয়নে, ৬ এপ্রিল পানপট্টি ও ২৭ জুলাই দেওয়ান বাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন জানান, গলাচিপার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি চালু করতে না পারায় অগ্নিকাণ্ডে জনগণের সম্পদহানি হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পটুয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নিজামউদ্দিন জানান, গলাচিপায় নির্মিত স্টেশনটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এই স্টেশনের জন্য দুটি গাড়ি ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। ফায়ারম্যান, গাড়িচালক, স্টেশন কর্মকর্তা, লিডারসহ অধিকাংশ লোকবলও দেওয়া হয়। আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স চলে আসবে এই স্টেশনে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও ছোট ভাঙাচোরা এই সড়ক দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করবে না, বের করাও যাবে না। এই অবস্থায় স্টেশনটি বুঝে নিলেও মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।
নিজামউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ ও গলাচিপা পৌরসভাকে জানিয়েছি। যেহেতু রাস্তাটি পৌরসভার, তাই পৌরসভা দ্রুত সড়কটি নির্মাণ করবে এবং আমরাও দ্রুত ফায়ার স্টেশনটি থেকে সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’