ভাঙনের ঝুঁকিতে চরে আলো ছড়ানো স্কুলটি

বন্যার সঙ্গে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। এতে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল সকালে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ
বন্যার সঙ্গে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। এতে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল সকালে।  ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

১৯৪২ সাল থেকে দুর্গম চরের শিশুদের মধ্যে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ৮১ নম্বর বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের মুখে। পদ্মার ভাঙনে যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিদ্যালয়ের আসবাব সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির অবস্থান শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর মৌজায়। দুর্গম ওই চরের চারদিকে পদ্মা নদী।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৪২ সালে বসাকের চর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক আছেন চারজন। এর আগেও বিদ্যালয়টি আরও কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মায় বিলীন হয়। এরপর বসাকের চরের নতুন জায়গায় ৪০ শতাংশ জমির ওপর ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি নতুন ঠিকানা পায়। ঘূর্ণিঝড়ে আধা পাকা ভবন বিধ্বস্ত হলে ২০১২ সালে একটি দ্বিতল ভবন ও ২০১৭ সালে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

বিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, পদ্মার ভাঙন যেভাবে হচ্ছে, তাতে মনে হয় না বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যাবে। যখন পাকা ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়, তখন নদী অন্তত দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল। চোখের পানি মুছতে মুছতে এই শিক্ষক বলেন, পরিস্থিতি মেনে নিয়ে পাশের সরকারকান্দি গ্রামের একটি জায়গায় আসবাব সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

স্কুল ভবন থেকে পদ্মার দূরত্ব এখন মাত্র ১৫ মিটার। স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ ধরে। দু–তিন দিন আগেও নদী ছিল অন্তত ১০০ মিটার দূরে।

চরআত্রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিনা জামান বলেন, ‘চরাঞ্চলের শিশুদের আলোকিত করার বিদ্যাপীঠটি এভাবে পদ্মায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে ভাবতেও পারিনি। যেকোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।’

বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হলে শিক্ষার্থীদের কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বসাকের চর ও জাজিরার দুটি বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি, বিদ্যালয়গুলো পদ্মায় বিলীন হলে শিশুদের কী হবে। কোথায় চালু করব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।’

নড়িয়ার সুরেশ্বর দরবার শরিফ প্রতিরক্ষা বাঁধের ২০ মিটার অংশ গত রোববার ধসে গেছে পদ্মায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট, ওকিলউদ্দিন মুন্সিকান্দি, বড়কান্দি ইউনিয়নের দুর্গাহাট, নাজিম উদ্দিন ব্যাপারীকান্দি, নড়িয়ার ঘরিসার ইউনিয়নের চরমোহন, বাংলাবাজার, চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর, কীর্তিনাশা নদীর নড়িয়ার মোক্তারের ইউনিয়নের ঢালীপাড়া, সদরের পালং ইউনিয়নে কোটাপারা, ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হকের নির্দেশে এসব জায়গায় ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপারা ইউনিয়নের ভাঙন রোধ করার জন্য সাড়ে পাঁচ শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর সুরেশ্বর দরবার শরিফ প্রতিরক্ষা বাঁধের যে স্থানে ধস সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ এ কে এম এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বসাকের চরের বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য চেষ্টা করছে পাউবো। সেখানে আরও এক মাস আগে থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। চরের মানুষের এ বিদ্যাপীঠটি রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।