বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে
বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে

‘ভাইয়া আমার ছেলেকে দেখে রেখো, যেকোনো সময় মারা যেতে পারি’

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বরগুনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে মাতম। তাঁদের ফিরে পেতে আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। লঞ্চে থাকা স্বজনের সন্ধান পেতে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ঝালকাঠি ও বরিশালে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ হচ্ছে তাঁদের অপেক্ষা।

লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ আছেন বরগুনা সদর উপজেলার বড় লবণগোলা এলাকার হাকিম শরীফ, তাঁর স্ত্রী পাখি বেগম ও তাঁদের দেড় বছরের শিশুসন্তান নাসিরুল্লাহ। হাকিম শরীফের মা এরাথন বিবি (৭০) আহাজারি করে বলেন, ‘আমার পোলায় ফোন কইররা কইছিল, মা, আমি বাড়িতে আসতে আছি। রাত পোহানোর পরও পোলায় আমার বাড়ি না আসায় অস্থির হইয়া পড়ি। মোবাইলে কল দিয়া ফোন বন্ধ পাই। আমার এক মাইয়া ঢাকা দিয়া বরগুনার লঞ্চে আগুন লাগার কথা জানাইলে আমার শরীরে কাঁপোন ধইররা যায়! ’

বৃহস্পতিবার অভিযান-১০ লঞ্চে ঢাকা থেকে বরগুনায় আসছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা ঢলুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া খাজুরা গ্রামের মো. মহিব (৩০)। সর্বশেষ স্ত্রী লিপির সঙ্গে ওই দিন রাত ১২টায় কথা হয় তাঁর। বাচ্চা কী করছে—ফোন করে সেই খবর নেন। লঞ্চে আগুন লাগার পর বড় ভাইকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘ভাইয়া, তুমি আমার ছেলেকে দেখে রেখো। আমি যেকোনো সময় মারা যেতে পারি।’ এর পর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নিখোঁজ মহিবের মা তহমিনা বলেন, ‘ছেলেকে রাত ১২টার দিকে আমি ফোন করেছিলাম। তখন আমাকে বলে, মা, আমার মনটা ভালো লাগছে না। আমি বরগুনা লঞ্চঘাট এসে ফোন দেব। লঞ্চে আগুন লাগার পর থেকে ছেলে আমার নিখোঁজ। ওর একটা ১৮ মাসের বাচ্চা আছে। আমার বাবাটার খোঁজ পাচ্ছি না। আমি কী করে থাকব! কীভাবে আমার নাতিকে নিয়ে দিন কাটাব।’

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। ঢাকা থেকে লঞ্চটি বরগুনা যাচ্ছিল। বরগুনা জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী লঞ্চ দুর্ঘটনায় এখনো ৪১ জন নিখোঁজ। তবে রেড ক্রিসেন্টের তালিকা অনুযায়ী ৫১ জন নিখোঁজ।

এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক মো. হামজালাল শেখকে প্রধান আসামি করে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বরগুনার সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার সকালে এ মামলার আবেদন করেন।