উপজেলার দুটি ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থীরা বলেছেন, দলীয় নেতা–কর্মীরা তাদের সহায়তা করেননি।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ি দোবড়া ও কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। সরকারদলীয় সংগঠনের প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
দলীয় দুই প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের
হেরে যাওয়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কোন্দল কিছুটা দায়ী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ ভোট দেয়নি। এমনকি কয়েকটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও পক্ষে কাজ করেননি। এ কারণে নৌকা হেরেছে।ওয়ালী উল্লাহ, দেউলবাড়ি দোবড়া ইউপিতে আ.লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী
গত বুধবার এ দুটি ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেউলবাড়ি দোবড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তিনজন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়ালী উল্লাহ পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৩৫ ভোট। বিপরীতে দলটির বিদ্রোহী এফ এম রফিকুল আলম (চশমা) ৪ হাজার ৬০৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ভোটের হিসাবে রফিকুলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ালী উল্লাহ ১৯ বছর ধরে একটানা চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার দলীয় কোন্দলের কারণে দলের একাংশের ভোট পাননি। এ কারণে দলটির নেতা-কর্মীদের ভোট তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এফ এম রফিকুল আলম বলেন, এলাকার অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করতে না পারায় ভোটাররা ওয়ালী উল্লাহর প্রতি বিমুখ ছিলেন।
আর ওয়ালী উল্লাহ বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাঁকে ভোট দেয়নি। এমনকি কয়েকটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ
সম্পাদকও তাঁর পক্ষে কাজ করেননি। এ কারণে নৌকা হেরেছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতা বলেন, ওয়ালী উল্লাহ নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি একসময় বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। অপর দিকে রফিকুল আলম ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আটজন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানাত ডালিম (আনারস প্রতীক) ৬ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে হাসানাত ডালিম বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কবির হোসেন বাহাদুর (নৌকা প্রতীক) ৩ হাজার ১১৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। ৭৪৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নামজুল হুদা। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে ছয় হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
সরকারদলীয় সংগঠনের প্রার্থীর ভরাডুবি নিয়ে কথা হয় ইউনিয়নটির অন্তত ১৯ জন ভোটারের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, কবির হোসেন বাহাদুর জনপ্রিয় নন। এ ছাড়া দলের একটি বড় অংশ তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন।
এ বিষয়ে কবির হোসেন বাহাদুর বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের একটি পক্ষ তাঁর জন্য কাজ করেনি।
তবে কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুর মিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী কবির হোসেনের নির্বাচনে সহায়তা
না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে তিনি আন্তরিকভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন।