সান্তাহার হাসপাতাল

ভবন নির্মাণেই দেড় যুগ পার

২০০৫ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ না হলেও উদ্বোধন করা হয় পরের বছরই। দেড় যুগের বেশি সময় পর কাজ শেষ হয়েছে চলতি মাসে।

সান্তাহার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। সম্প্রতি বগুড়ার আদমদীঘির রথবাড়িতে।
ছবি:  প্রথম আলো

নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় দেড় যুগ পর শেষ হয়েছে বগুড়ার সান্তাহারে ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণকাজ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হাসপাতালটি হস্তান্তর করেছে। নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আসবাব না পাওয়ায় এখানে চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হয়নি।

আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নির্মাণকাজ শুরুর কয়েক বছর পরই হাসপাতালটিতে লোকবল নিয়োগ হয়। কিন্তু কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় তাদের অন্যান্য হাসপাতালে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ হলেও সেগুলো অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পাঁচজন নার্সসহ আটজন নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তাঁরা বর্তমানে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, সান্তাহারের হাসপাতালটি চালুর জন্য নতুন করে জনবল নিয়োগ, সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় আসবাব বরাদ্দের প্রয়োজন। সব চাহিদা পূরণ হলে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, নির্মাণকাজে যেমন দীর্ঘ সময় লেগেছে তেমনি এবার জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জাম বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিতে পারে। তাঁদের শঙ্কা, এতে মানুষের হাসপাতালটি থেকে সেবা পাওয়ার অপেক্ষাও দীর্ঘ হবে।

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দীন বলেন, সান্তাহার শহর ও আশপাশের লক্ষাধিক মানুষকে চিকিৎসাসেবা নিতে পাশের জেলা নওগাঁ বা আট কিলোমিটার দূরের আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুতই হাসপাতালটি চালুর দাবি করেন তিনি।

এদিকে হাসপাতালটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৫ সালের ৩০ মে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সান্তাহার শহরের রথবাড়ি এলাকায় হাসপাতালটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষ না হলেও রাজনৈতিক কারণে ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এটি স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন পায়।

চারদলীয় জোট সরকারের সময় ঠিকাদার ও খালেদা জিয়ার ভাগনে শাওরিন ইসলাম নির্মাণকাজের প্রায় ৮২ লাখ টাকার অগ্রিম বিল তুলে নেন। পরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তিনি কাজ বন্ধ রেখে লাপাত্তা হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে চিকিৎসকসহ হাসপাতালের অন্যান্য দপ্তরের লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাকাজে ব্যবহারের জন্য প্রায় দুই কোটি টাকার বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।

কিন্তু তখনো নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকসহ অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীদের অন্যত্র নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে সান্তাহার হাসপাতালের জন্য পাঠানো চিকিৎসা সরঞ্জাম আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বগুড়ার মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে হাসপাতালের অসমাপ্ত কাজের পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রায় ৩ কোটি টাকার চুক্তি মূল্যে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় কাজ পাওয়া ঠিকাদার ফারুক হোসেন জানান, নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বগুড়া জেলার সিভিল সার্জন গওসুল আজিম চৌধুরী বলেন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী, অস্ত্রোপচারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পেলেই হাসপাতালটি চালু হবে।