সিলেটের বিজ্ঞানলেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া একজনকে আদালত খালাস দিয়েছেন। আজ বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫) ও খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) এবং কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)। এ ছাড়া সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমানকে (৩০) খালাস দেওয়া হয়েছে।
ছয় আসামির মধ্যে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিন আসামি আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক।
দ্রুত এই রায় কার্যকর দেখতে চাই।সমর বিজয় সী শেখর, অনন্তের বড় বোনের স্বামী
সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মুমিনুর রহমান টিটু চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের খালাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রায় ঘোষণার সময় অনন্তের বড় বোনের স্বামী সমর বিজয় সী শেখর আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুত এই রায় কার্যকর দেখতে চাই।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল আহাদ বলেন, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে ১৪ মার্চ পলাতক তিন আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ ধার্য করেন।