ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২৭ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের বিশেষ সংখ্যায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
২৫ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ গেজেটের ওই বিশেষ সংখ্যায় শফিকুলসহ দেশের ৩৬ জনের সনদ ও গেজেট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বিষয়ে তদন্ত হয়। সেখানে শফিকুল নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। পরে জামুকার ৬৯তম সভায় শফিকুলসহ ৩৬ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
২৫ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ গেজেটের ওই বিশেষ সংখ্যায় শফিকুলসহ দেশের ৩৬ জনের সনদ ও গেজেট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই হয়। সে সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুলকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনবার নোটিশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কিন্তু শফিকুল উপস্থিত হননি। ২০১৮ সালে জামুকার চেয়ারম্যানের কাছে তিনি আপিল করেন। চলতি বছরের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শফিকুলের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয়। শুনানির সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং যুদ্ধকালীন কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে তেলিয়াপাড়ায় যুদ্ধকালীন কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে রাখা হয়েছিল।আল মামুন সরকার, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
আল মামুন সরকার বলেন, চূড়ান্ত শুনানিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তাঁকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন। কোথায় যুদ্ধ করেছেন। কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সময় কমান্ডার কে ছিলেন এবং অস্ত্র জমা দেওয়ার রশিদে স্বাক্ষর আছে কি না। উত্তরে শফিকুল বলেন, হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ২০৭১ সালের ১১ এপ্রিল তাঁকে সেখান থেকে একটি স্ট্যানগান দেওয়া হয়েছিল। তিনি একাই যুদ্ধ করেছেন। তাঁর কোনো কমান্ডার ছিল না। ১১ ডিসেম্বর তিনি সদর উপজেলার বিরামপুরে যুদ্ধ করেছেন।
আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি প্রয়োজনে আদালতে যাব।শফিকুল আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
আল মামুন সরকার বলেন, প্রকৃতপক্ষে তেলিয়াপাড়ায় যুদ্ধকালীন কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে রাখা হয়েছিল। সে সময় ১১ ডিসেম্বর সদর উপজেলার বিরামপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেননা ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্ত দিবস। শফিকুল চূড়ান্ত শুনানিতে অস্ত্র জমা দেওয়ার একটি রশিদ দেখিয়েছিলেন। যেখানে বল পেনের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে বল পেনের ব্যবহার ছিল না।
শফিকুল আলম বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়েছেন। লালমুক্তি বার্তা ও বেসামরিক গেজেটে তাঁর নাম আছে। এসব কি যাচাই-বাছাই ছাড়াই হয়েছে? আগে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে ছিলেন, তাঁরা তো এত দিন তাঁর বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। বর্তমান যাচাই-বাছাই কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে এসব করছে। তিনি জামুকায় আপত্তি দিয়েছেন। প্রয়োজনে আদালতে যাবেন।