ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনলাইন কোরবানির পশুর হাট’ জমে উঠেছে। এই কাজে সহযোগিতা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গবাদিপশুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও তত্ত্বাবধানে ফেসবুকে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনলাইন কোরবানির পশুর হাট’ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পেজের ঠিকানা: www.facebook.com/onlineposhurhaat। জেলা প্রশাসনের এই পেজে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০৪ জন যুক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগও পশু বিক্রির এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা আনতে সহায়তা করছে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর অনলাইনে মাসখানেক একটি গ্রুপ ও একটি পেজ খোলে। ওই গ্রুপে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬২৬ জন যুক্ত হয়েছেন।
১৭ জুলাই থেকে আজ বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের অনলাইনে কোরবানির পশুর হাটে পশু বিক্রিসংক্রান্ত ৩৪৭টি পোস্ট পড়েছে। আর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গ্রুপে ৩১০টি খামারমালিক ও পেজে ২০০ খামারমালিক নিজের খামারের তথ্য দিয়ে যুক্ত হয়েছেন।
আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া গত শুক্রবার এক লাখ টাকায় একটি কালো রঙের গরু বিক্রি করেন। স্বপ্ন ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ফার্ম নামের একটি খামারের কালো রঙের একটি গরু ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় এবং ৯৮ হাজার টাকায় অপর একটি গরু বিক্রি হয়। নিউ প্রিন্স ডেইরি ফার্মের একটি গরু আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জেলা সদরের প্রিন্স ডেইরি ফার্ম পরিচালনকারী ফোরকান আহমেদ জানান, অনলাইনে ‘বিজ্ঞাপন’ দেখে এক ব্যক্তি ঢাকায় তাঁর আত্মীয়ের জন্য গরু দেখতে আসেন। ভিডিও কলে দেখিয়ে একটি গরু পছন্দ করেন। ৪৫০ টাকা কেজিতে ২৮০ কেজির ওপরে একটি গরু তিনি তাঁর কাছে বিক্রি করেন। ঈদের দুদিন আগে ওই ব্যক্তি ওজন করে সেই অনুসারে দাম দিয়ে গরু নিয়ে যাবেন।
জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, খামারমালিকদের পাশাপাশি একটি-দুটি করে গরু পালনকারী ব্যক্তিরাও এখানে গরুর ছবি দিয়ে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ দামও লিখে দিচ্ছেন। কেউ আবার ফোন নম্বর দিয়ে বলে রেখেছেন দাম আলোচনা সাপেক্ষে। আবার অনেক খামারমালিক ও গরু পালনকারী ব্যক্তি একাধিক গরুর ছবিও ভিডিও দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রির কথা বলা হয়েছে। আকারভেদে গরুর দামও নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করা আছে। পেজে গরুর পাশাপাশি মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রির বিজ্ঞাপনও আছে। ইতিমধ্যে অন্তত ৮-১০ হাজার ক্রেতা পেজে ঢুকে সাড়া দিয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর কোরবানি ঈদে জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার পশু বিক্রি করা হয়েছে। এ বছর ১ লাখ ২ হাজার বিক্রি করা হবে। জেলায় ১২ হাজার ৪৫৭টি খামারে ১ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি পশু মজুত রয়েছে। এ ছাড়া একটি-দুটি করে গবাদিপশু পালন করা অনেক ব্যক্তি রয়েছেন। এগুলো গণনার বাইরে। আর জেলায় প্রতিবছর দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক গরু আসে। এবার কোরবানির পশু জেলায় উদ্বৃত্ত থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইন পশুর হাট চালু উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ দৌলা খান। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা বক্তব্য দেন।
জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ও ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নূরে আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পেজের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পেজের সংযুক্তি দেওয়া আছে। এখন পর্যন্ত গ্রুপে ৩১০টি ও পেজে ২০০ খামার যুক্ত রয়েছে। ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে খামারের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের গরুর তথ্য, ছবি ও মালিকের মুঠোফোন দেওয়া আছে। এ ছাড়া মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার তথ্যও দেওয়া আছে। অনেকে ইতিমধ্যে খামারের অধিকাংশ গরু বিক্রি করে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন। গ্রুপে ও পেজে যুক্ত হওয়া খামারের প্রায় ২০ শতাংশ গরু অর্থাৎ ১০ হাজারের বেশি পশু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ দৌলা খান বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে হাটে না গিয়ে অনলাইনে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনার জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। বিষয়টি প্রচার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সড়ক, মহাসড়কের পাশে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।