ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কুমিল্লা–সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর এলাকায় পুলিশ–বিজিবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া শহরের কান্দিরপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগ ও মাদ্রাসাছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন নন্দনপুর হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়ার্কশপের দোকানি জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে শ্রমিক বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারিউড়া এলাকার মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২) ও বুধল ইউনিয়নের বুধল গ্রামের প্লাম্বার শ্রমিক মো. কাউওসার (২২)।
কান্দিরপাড়া এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ছাত্রের নাম জুবায়ের (১৭)। তার বাড়ি সদর উপজেলার সরিদপুর গ্রামে। সে কান্দিরপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে নিহতের পরিচয় পাওয়া গেছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রানা নুরুস শামস গুলিবিদ্ধ হয়ে এই পাঁচজনের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর থেকে তাঁর লোকজন (পুলিশ) কোনোমতে প্রাণে বেঁচে এসেছেন। পুলিশের অনেকে আহত হয়েছেন। নিহতের ঘটনায় বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ন থেকে বিকেল চারটার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা–কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজনও হেফাজতের মিছিলে যোগ দেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। পরে বিজিবি ও পুলিশ গুলি ছোড়ে।
গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁরা মারা যান। তাঁরা তিনজনই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আলী আহমেদের ছেলে শ্রমিক কাউসার মিয়া, নুরুল আমিন (৩৫), বাছির মিয়া (২৮) ও ছাদেক মিয়াকে (৩৫) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে সন্ধ্যার পর কাউসারের মৃত্যু হয়।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ ও কওমি মাদ্রাসাছাত্রদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের টিএ রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সংবাদকর্মীসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলার শহরের সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ‘জঙ্গিবিরোধী’ একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি জেলা শহরের ঘোড়াপট্টি সেতু ও টিএ রোড এলাকা অতিক্রম করে। টিএ রোড এলাকায় মিছিল থেকে মাদ্রাসাছাত্রদের উদ্দেশ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। পরে মাদ্রাসার ছাত্ররাও তাঁদের মিছিলকে ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মিছিল থেকে কান্দিপাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার দিকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন। এতে মাদ্রাসাছাত্ররা মসজিদের ভেতরে অবরুদ্ধ থাকেন। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ককটেল, ছুরি, দা, লাটিসোঁটা, রামদা নিয়ে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ করতে শুরু করেন।
সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে কান্দিপাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার ছাত্ররা ছাদে উঠে মাদ্রাসাকে রক্ষার জন্য মানুষের কাছে সহযোগিতা আহ্বান জানান। অপর দিকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা টিএ রোড এলাকায় দোকানপাট ভাঙচুর করেন।
একপর্যায়ে মাদ্রাসাছাত্ররা ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে ঘোড়াপট্টি সেতুর উত্তর দিকে নিয়ে যান। পরে মাদ্রাসাছাত্র ও ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
এদিকে হামলার সময় এটিএন নিউজের আলোকচিত্রী সুমন রায় আহত হন।
এই সংঘর্ষে আহত জুবায়েরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যার পর সে মারা যায়।