ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাভাইরাসে (কোভিড–১৯) সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। জেলায় করোনা সংক্রমণের প্রথম ৫২ দিনে আক্রান্ত হন ১৩১ জন। আর শুধু জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫১ জন, যা ওই ৫২ দিনের তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি।
জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। জেলায় বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ২ হাজার ৫৪ জনের শরীরের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
জেলায় কোভিড-১৯ রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪ জন। জেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১০ এপ্রিল। ওই সময় থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৫২ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হন ১৩১ জন। সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর জুন মাসের ৩০ দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৩৭ জন। অর্থাৎ, প্রতিদিন ২৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন, যা মোট সংক্রমণের ৪০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জুলাই মাসের প্রথম ১৭ দিনে জেলায় আক্রান্ত হন ৭৩৪ জন। এরপর পুরো মাসে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫১, যা মোট সংক্রমণের ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। চলতি ১২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জেলায় করোনায় পজিটিভ হন ১৩৫ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চারটি কারণে জেলায় করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা ও অসচেতনতা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ১৮৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮৫০ জনের নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। ঢাকার সরকারি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার এবং জেলার বেসরকারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব নমুনা পরীক্ষার ফলাফল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠান। সেই তথ্য অনুযায়ী জেলায় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায়। এখানে আক্রান্ত ৭০৬ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এপ্রিল মাসে ৪৩ জন, মে মাসে ৮৮ জন, জুন মাসে ৮৩৭ জন, জুলাই মাসে ৯৫১ জন ও চলতি মাসের ১২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে ২০ জন, জুনে ১৩ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং বাকি ৪ জন চলতি মাসে মারা গেছেন। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা ও নবীনগর পৌরসভার ১১টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত জুলাই মাসেই সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা, অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা, সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা এবং মাস্ক ব্যবহার করার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।