ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নবীনগর উপজেলায় ৩৭ জন শনাক্ত হয়েছেন।
জেলায় গত সাত দিনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। গত মঙ্গলবার জেলায় একজন সাংবাদিকসহ ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, এখন লক্ষণবিহীন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাঁরা করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। তবে সবার আগে মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। তাঁরা বলেন, চলতি সপ্তাহে যে ৪৩ জন শনাক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। তাই সামাজিক দূরত্ব বেশি বেশি বজায় রাখতে হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল জেলার নবীনগরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। তবে তিনি সেদিন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরের দিন জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে জেলা শহরে এক নারী এবং একই লক্ষণ নিয়ে নবীনগরে আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আর জেলায় সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে জেলা শহরের পূর্ব মেড্ডায় অবস্থিত বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হয়। বাকিদের ঢাকার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেদিনই জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউন ঘোষণা করে। আর ১১ এপ্রিল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। ২৪ এপ্রিল জেলা সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধসংক্রান্ত জেলা কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০ শয্যার আইসোলেশন কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরও ১০০ শয্যার আইসোলেশনের অনুমোদন হয়। এ ছাড়া নাসিরনগরের ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৫০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত হয়। আর এখন জেলার পৌর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করার চিন্তা করছে জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ৫ জন চিকিৎসক, ১ জন সাংবাদিকসহ ১১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫৭ জন।
শনাক্ত রোগীদের মধ্যে নাসিরনগরে ১০ জন, আখাউড়ায় ১৭, সদরে ১২, বিজয়নগরে ১০, নবীনগরে একই পরিবারের ১২ জনসহ মোট ৩৭, বাঞ্ছারামপুরে ৬, সরাইলে ৮, কসবায় ১ জন সাংবাদিকসহ ৯ এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় ৪ জন রয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত পাঁচ চিকিৎসকের সবাই সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জেলায় ৪৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইসোলেশনে আছেন ৪৭ জন, কুমিল্লায় ১ ও ঢাকায় ৬ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ফল পাওয়া গেছে ৩ হাজার ২৯৩ জনের। জেলার একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৯ জন।
জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সামাজিক দূরত্ব মানছে না সাধারণ মানুষ। গত সোম থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। ঈদ উপলক্ষে হাটবাজারে দিব্যি কেনাকাটায় ব্যস্ত লোকজন। রাস্তায় অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা চলছে সমানতালে। সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই কোথাও।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে ৪৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। আমাদের প্রস্তুতি আছে, তবে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বেশি বেশি বজায় রাখতে হবে।’