ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ঈদগাহ কমিটির হিসাব-নিকাশকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির হোসেন (৫০) ওই গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় একই গ্রামের মনির হোসেন (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
তিন মাস আগে লক্ষ্মীপুর গ্রামে খাসজমি নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নাজির হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। ওই মামলার আসামি ছিলেন গতকালের সংঘর্ষে নিহত জাকির হোসেন (৫০)। ওই মামলার আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর গ্রামে একটি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ আছে। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদের জামাত হয়নি। মাঠটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই গ্রামের নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ঈদগাহ সংস্কার করেন। গত মঙ্গলবার ঈদের দিনে ঈদগাহ মাঠে বিষয়টি মুসল্লিদের অবহিত করা হয়। এ সময় গ্রামবাসী নগদ ১৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন এবং বাকি টাকা আদায় করে ৬০ হাজার টাকা নুরুল আমিনকে দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের মনির হোসেন গ্রামের কিছু লোকজনকে একত্র করে ঈদগাহ কমিটির টাকা উত্তোলনের হিসাব দেওয়ার জন্য গত শুক্রবার রাতে ওই গ্রামের প্রধান মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। এতে কিছু লোকজন উপস্থিত হন। এ সময় জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলতে থাকেন, কমিটির সভাপতি করোনাকালীন মারা গেছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাহাবুব এবং সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়াসহ কেউই উপস্থিত নেই, এখন হিসাব দেওয়া যাবে না। এ নিয়ে মনির হোসেন, আবদুল জলিল, সফিক মিয়া ও সোহেল মিয়া ও তাদের লোকজনের সঙ্গে জাকির হোসেন ও তাঁদের লোকজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে হাতের টর্চলাইট দিয়ে জাকির হোসেনকে আঘাত করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন জাকির। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মনির হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কসবা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আমানউল্লাহ বলেন, সুরতহালে প্রাথমিকভাবে শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
পুলিশের হাতে আটকের আগে মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ঈদগাহ কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরাই বৈঠক না করতে হট্টগোল করেছে। জাকির হোসেনকে কেউ মারেনি। তাঁর হার্টের অসুখ ছিল। হার্ট অ্যাটাকেই মারা গেছেন তিনি।’
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, ঈদগাহ কমিটির হিসাব নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া মনির হোসেনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।