ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দুই শতাধিক বসতভিটা বিলীন

তিন বছর ধরে ভাঙন চলছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরহাতিজা গ্রামে। তবে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বসতভিটা ভাঙনের মুখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এক নারী। গত বৃহস্পতিবার জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরহাতিজা গ্রামে

ব্রহ্মপুত্রের প্রবল ভাঙনে বিলীন পৈতৃক ভিটেমাটি, জায়গাজমি। সব হারিয়ে দিশেহারা ফরিদা বেগম। সন্তানদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন প্রতিবেশী দেলবানুর বাড়ির উঠানে। এক মাসের ব্যবধানে রাক্ষুসে ভাঙন দেলবানুর ভিটা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে এই ঘরও নদের গর্ভে চলে যাবে। তিন বছর ধরে এমন করুণ অবস্থা প্রতিটি পরিবারের।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় দুরমুট ইউনিয়নের চরহাতিজা গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের শিকার হয়ে তিন বছরে দুই শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। পরিবারগুলো সবকিছু হারিয়ে আত্মীয় বা অন্যের বাড়ির উঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

ফরিদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী কৃষিকাজ করতেন। দুটি থাকার ঘর ও গোয়ালঘর ছিল। কয়েক বিঘা আবাদি জমিও ছিল, ছিল গবাদিপশু। এক মাস আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তিনি এখন নিঃস্ব। একদম রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। কিছু জিনিসপত্র নিয়ে অন্যের বাড়ির উঠানে ঠাঁই হয়েছে। কোথায় যাবেন, কী করবেন, বুঝতে পারছেন না তিনি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মেলান্দহ-ইসলামপুর সীমানার শেষ মাথায় চরহাতিজা গ্রাম। এই গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। জামালপুর-ইসলামপুর সড়কের ৭০০ থেকে ৮০০ মিটার দূরেই ভাঙনের স্থান। গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদের গর্ভে চলে গেছে। পাড়ে বিশাল আকার ধরে ফাটল ধরেছে। গাছপালা ও বাঁশঝাড় নদের মধ্যে ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙন কিছু বাড়ির উঠানে চলে আসছে।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নের চরহাতিজা গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিন বছরে দুই শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার

নদের ভাঙন মালেকা বেগমের ঘরের ভিটা পর্যন্ত চলে আসছে। তিনি কোথায় যাবেন, তা-ই ভাবছেন। ঘরটি যেকোনো মুহূর্তে নদের গর্ভে চলে যাবে জেনেও এখনো অন্যত্র সরাননি। তিনি বলেন, ‘চরহাতিজা গ্রামের সব মানুষগো গ্রামছাড়া করতেই এই খেলা চলছে। কবে থেকে নদী ভাঙছে তো ভাঙছেই। কারও মাথাব্যথা নেই। শহর থাইকা কত্ত অফিসার আইল আর গেল। সবাই দেখেই চলে যায়। এদিকে আমগরে সর্বনাশ হচ্ছে। কই এখনো ভাঙন ঠেকাতে একটি বালুর বস্তাও ফেলা হলো না।’

গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, কয়েক সপ্তাহে এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের কৃষিজমিও বিলীন হয়েছে। দুলাল মিয়া নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, তিন বছর ধরে ভাঙন চলছে ব্রহ্মপুত্রের। সেই সময় থেকে গ্রামবাসী ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে আসছেন। কিন্তু কেউ কথা কানে তোলেননি। আগে আস্তে আস্তে ভাঙছিল। কিন্তু বন্যার পর থেকে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ শুরু করে। এসব তাঁরা সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু করারও কিছু নেই।

পাউবো জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, চরহাতিজা গ্রামে ভাঙন রোধ করতে বরাদ্দ চেয়ে পাউবোর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।