বোচাগঞ্জে কবরস্থান-শ্মশান বিলীন হচ্ছে

বনগাঁও-সাদামহল গ্রামের কবরস্থান ও শ্মশান টাঙ্গন নদের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
বনগাঁও-সাদামহল গ্রামের কবরস্থান ও শ্মশান টাঙ্গন নদের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও ও সাদামহল গ্রামের একমাত্র কবরস্থান ও শ্মশান টাঙ্গন নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

 কবরস্থান ও শ্মশানের উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা নিয়ে প্রায় এক হাজার মিটার জায়গা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদের ভাঙনের কবল থেকে কবরস্থান ও শ্মশান বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দরগাখাড়ি শ্মশানঘাট থেকে কবরস্থানের উত্তর দিকে সেগুনবাগান পর্যন্ত হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সাদামহল কবরস্থান-শ্মশানের দুই-তৃতীয়াংশই নদের গর্ভে চলে গেছে। গতবারের বর্ষাকালেও টাঙ্গন নদের পানির তোড়ে ওই জায়গায় অন্তত ২০ ফুট এলাকার মাটি নদের গর্ভে চলে গেছে।

কবরস্থান রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, কবরস্থানটির দুই-তৃতীয়াংশই টাঙ্গন নদ গ্রাস করেছে। কবরস্থানের জমির সঙ্গে তাঁদের পূর্বপুরুষদের কবরও নদের পেটে চলে গেছে। কবর জিয়ারত করতে গিয়ে নদের পানির দিকে হাত তুলে দোয়া করতে হয়, এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে। কবরস্থানটি রক্ষার জন্য বোচাগঞ্জের ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।

বনগাঁও-সাদামহল কবরস্থান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বোচাগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও মণ্ডলপাড়া গ্রামের জবাইদুর রহমান ও ঈদগাহ জামাতের ইমাম আফসার আলী বলেন, সাদামহল মৌজার ৩৫৮, ৩৬২ ও ৩৬৩ দাগের ৯ একরের কবরস্থানের উত্তর প্রান্তে দেড় একর জায়গায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ও দক্ষিণ প্রান্তের দেড় একর জায়গায় হিন্দুদের শ্মশান রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দুই মৌজার প্রায় ১০–১১ হাজার পরিবারের মৃত ব্যক্তিদের এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে এবং শ্মশানে দেড়-দুই হাজার হিন্দু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

কবরস্থান রক্ষা কমিটির সদস্য বনগাঁও গ্রামের প্রভাষক জিয়াউর রহমান বলেন, ১৭-১৮ বছর আগে কবরস্থান-শ্মশান থেকে প্রায় এক হাজার মিটার পশ্চিমে পীরগঞ্জ উপজেলার খাড়িপাড়া এলাকা দিয়ে নদের পানি প্রবাহিত হতো। প্রতিবছর বর্ষাকালে নদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে ভাঙছেই।

বোচাগঞ্জের ইউএনও ফকরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি বাস্তব অবস্থা দেখেছি। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য মানুষের কথাও শুনেছি। কবরস্থান-শ্মশান রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গত বছরের জুলাই মাসে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’