বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলার ব্যাঙছড়ি এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের জোত পারমিট দিয়ে অশ্রেণিভুক্ত সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাঙছড়ির বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাঠ পাচারকারী চক্র দুর্গম পাহাড়ে ট্রাক চলাচলের জন্য নিজেরাই গোপন রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ওই রাস্তায় ট্রাকে করে বনের মাতৃগাছগুলো কেটে নিয়ে আসা হচ্ছে লোকালয়ে। এরপর বাগানের জোত পারমিট দেখিয়ে সেসব পাচারও করা হচ্ছে।
রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ব্যাঙছড়ি গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু-নিচু দুর্গম পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে ছোট আকারের ট্রাক চলাচল করছে। রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ব্যাঙছড়ি রাস্তায় ঢুকতেই তারাছা খালের পাড়ে একটি কাঠবোঝাই ট্রাকের দেখা মেলে। ছবি তোলা হচ্ছে দেখে ট্রাকটি দ্রুত খাল পার হয়ে চলে যায়।
রাস্তায় ১০-১১ জনের কাঠশ্রমিকের একটি দলের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁদের একজন আব্দুল করিম জানালেন, বান্দরবান জেলা শহরের মো. শফি নামে একজন জ্যেষ্ঠ মাঝির (শ্রমিকদের দলনেতা) আওতায় কাঠ কাটতে যাচ্ছেন। গাছ কার তা জানেন না। এক ফুট রদ্দা (চেরাইকাঠ) কাঠের জন্য ৩০০ টাকা চুক্তি হয়েছে। ব্যাঙছড়িপাড়া থেকেও আড়াই-তিন কিলোমিটার দূরে বাগান নয়, বনাঞ্চলের গাছ কাটবেন।
ব্যাঙছড়ির কাছাকাছি ছোট্ট একটি দোকানে নিরঞ্জন বড়ুয়া ও গলেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেছেন, কারও পাঁচ একর বন্দোবস্ত জমি থাকলে বাগান না থাকলেও জোত পারমিট নেওয়া যায়। সরকারি বনাঞ্চলের গাছ কেটে ওই জোত পারমিটে বৈধ করে কাঠ নেওয়া হয়। অর্থাৎ বৈধ পারমিটে অবৈধ কাঠ পাচার হয়। এভাবে ব্যাঙছড়ি এলাকার রাইনখ্যং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে আনা হচ্ছে। এ জন্য চোরা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
লুংলাইপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) কুনদির বম বলেছেন, কাঠ পাচারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেরই কিছু প্রভাবশালী নেতা জড়িত। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ নেই। বন বিভাগও এ নিয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। তবে পাচারের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের নাম বলতে চাননি তিনি।
রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমা বলেছেন, কেবল ব্যাঙছড়ি নয়, রনিনপাড়া, খামতাংপাড়া, লিরাগইপাড়ার বনের গাছপালা কেটে জোত পারমিট দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে। রোয়াংছড়ির অনেক জায়গা সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দুর্গম। কিন্তু কাঠপাচাকারীরা এসব দুর্গম পথেও নিজেরা রাস্তা বানিয়ে নিয়েছেন।
বন বিভাগের রোয়াংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান মো. শহীদুজ্জামান বলেছেন, বন বিভাগের অধিভুক্ত সংরক্ষিত বনভূমি থেকে কোনো গাছ কাটা হয় না। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আওতাভুক্ত অশ্রেণিভুক্ত বনে গাছ কাটা হচ্ছে কি না, তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তবে সেই ক্ষেত্রেও তাঁদের সীমাবদ্ধতা আছে। তাঁরা গাছ কাটার সময় ধরতে পারেন না। পরিবহনের সময় জব্দ করতে পারেন।
তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পাল্পউড) বিপুল কৃষ্ণ দাশ কাঠ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, সমস্যা হচ্ছে দরিদ্র পাহাড়িরা তাঁদের মালিকানাধীন বনের দুই–একটি গাছ কেটে বিক্রি করেন। মানবিক কারণে দরিদ্র মানুষের ওই গাছ জব্দ না করার জন্য বনকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওই গাছগুলো কাঠ ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যান। প্রকৃতপক্ষে বন ধ্বংস করে কাঠ পাচার হচ্ছে না।