বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান এখন প্রচারিত হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবে। অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মতো লোকবল নেই এই কেন্দ্রের।
রেডিওতে কান পেতে অনুষ্ঠান শোনার একসময়ের চল এখন আর চোখে পড়ে না। প্রযুক্তির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমেই বিনোদনের নানা উৎস খোঁজেন শ্রোতা-দর্শকেরা। মাধ্যম আর চাহিদা পরিবর্তনের কারণে বদলে যেতে শুরু করেছে বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারের ধরনও।
বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের ধারণ করা বা সরাসরি অনুষ্ঠানও এখন প্রচারিত হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবে। এফএম মাধ্যমে রেডিওর অনুষ্ঠান শোনা যাচ্ছে মুঠোফোনেও। এতে শ্রোতা পেলেও, এফএম ও এএম—দুই চ্যানেলে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার মতো লোকবল রাজশাহী বেতারের নেই। আছে স্টুডিওর সংকট ও পুরোনো ভবনের বিড়ম্বনাও।
বেসরকারি এফএমের মতো অনুষ্ঠান তৈরির জন্য বেতারের স্টুডিওকে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। যন্ত্রশিল্পীদের সংকটও দেখা দিয়েছে।হাসান আক্তার, আঞ্চলিক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার
এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব বেতার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘সবাই মিলে বেতার শুনি, বেতারেই আস্থা রাখি’। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শনিবারই তিন দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয় বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের ফেসবুক পেজে।
ফেসবুকে ওই পোস্টে গতকালই অনুষ্ঠান শোনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্তব্য লেখেন নাহিদ হাসান নামের এক শ্রোতা। জুবায়ের আল ফাহাদ নামের আরেক শ্রোতা লেখেন, ‘সঙ্গে আছি সব সময়।’
মুঠোফোনে এফএমে অনুষ্ঠান শুনলেও, অনুরোধের গানের বিষয়ে শ্রোতারা মন্তব্য লেখেন বেতারের ফেসবুক পেজে। গতকাল বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠান উপস্থাপকেরা লেখেন, ‘এফএম ৮৮ দশমিক ৮ মেগাহার্জে প্রিয় গান নিয়ে আপনাদের সাথে আছি খুশবু ও আকাশ। আমাদের সাথেই থাকুন।’ সেখানে ‘জীবন নামের রেলগাড়িটা’ শিরোনামের গান শুনতে চেয়ে মন্তব্য লেখেন অনুষ্ঠানের শ্রোতা ও রাজশাহীর তানোরের হরিদেবপুরের বাসিন্দা সিতেন কুমার।
তবে এর বিপরীতে বেতারের কার্যালয়ে শ্রোতাদের চিঠি লিখে মতামত জানানোর চল কমে গেছে। বর্তমানে রাজশাহী বেতারের চিঠিপত্র বা ই-মেইল জবাবের অনুষ্ঠান ‘সুজনেষু’ প্রচারিত হয় প্রতি বুধবার। বেতার সূত্রে জানা গেছে, এখন সপ্তাহে ১০ থেকে ১২টি চিঠি ও ২৫ থেকে ৩০টি ই-মেইল আসে। এ ছাড়া বেতারের পুরোনো অনুষ্ঠান রেডিও ম্যাগাজিন ‘স্পন্দন ও সবুজ বাংলা’ সেই আশির দশক থেকেই প্রচারিত হয়। সব অনুষ্ঠানই এখন বাংলাদেশ বেতারের অ্যাপের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে শোনা যায়।
বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্র সম্পর্কে এর আঞ্চলিক পরিচালক হাসান আক্তার বলেন, বেসরকারি এফএমের মতো অনুষ্ঠান তৈরির জন্য বেতারের স্টুডিওকে আরও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। আর রাজশাহীতে এখন যন্ত্রশিল্পীদের সংকট দেখা দিয়েছে। বেহালা, সেতার ও সরোজবাদক আর আগের মতো তৈরি হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী নগরের কাজলা এলাকায় ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ১৯৬৩ সালের ১ মার্চ দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এফএম ও এএম দুই চ্যানেলে অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে।