একের পর এক বিস্ফোরিত হচ্ছিল কেমিক্যাল ভর্তি কনটেইনার। কোনো কোনো কনটেইনারে আছে হাইড্রোজেন পারক্সাইড, আবার কোনো কোনো কনটেইনারে সালফার। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ঘটনাস্থলে আসা লোকজন চোখ খুলতে পারছেন না। বেশির ভাগ সদস্যের চোখ লাল হয়ে গেছে। কারও কারও চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের।
এদিকে শুধু পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের। কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। ক্লান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। কিন্তু কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুন তাঁদের বসে থাকতে দিচ্ছে না। একটু দম নেওয়ার পর আবার উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
মালিকপক্ষ আসেনি, কী কেমিক্যাল জানতে পারছে না উদ্ধারকারীরা
ডিপোতে আগুন জ্বলছে, কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণ
হতাহত ব্যক্তি উদ্ধার হলেই সাইরেন বাজিয়ে চলে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স
গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। এতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন সদস্য কাজ করছেন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে ডিপোটির পূর্ব অংশে ক্লান্ত হয়ে বসে ছিলেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর ওয়াসি আজাদ। রাসায়নিকের ধোঁয়ায় তাঁর দুই চোখ লাল দেখা গেছে। ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ধারণা প্রথম দিকে ডিপো কর্তৃপক্ষ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল। তারা সময়মতো ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়নি। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করে। তিন ইউনিটের সদস্যরাই বিস্ফোরণের কবলে পড়েন। খবর পেয়ে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফেনী থেকে এসে তাঁরাও যোগ দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিপোর ভেতরে বিভিন্ন স্থানে আগুন নেভানোর অনেক সিলিন্ডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ডিপোর ভেতরে প্রায় ৬০০ মিটারের টিনশেড আগুনে পুড়ে দেবে গেছে। তার ভেতরেও আগুন জ্বলছিল। একাধিক দলের সদস্যরা ভেতরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
ঘটনাস্থলে আসা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কেমিক্যাল পানি ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও তাঁদের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন তাঁদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল টিমও কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে আগুন লাগার কারণসহ বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।