বিশ্ব কাঁপাতে চায় মেহেরাজেরা

কক্সবাজার সৈকতে সার্ফিং করছে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন শবে মেহেরাজ । প্রথম আলো
কক্সবাজার সৈকতে সার্ফিং করছে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন শবে মেহেরাজ ।  প্রথম আলো

ছোটবেলায় পেটের তাগিদে সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেড়াত শবে মেহেরাজ। একসময় সৈকতে ঢেউয়ের তালে তালে অনেককে সার্ফিং করতে দেখে সেও জড়িয়ে যায় সার্ফিংয়ে। গতকাল রোববার পঞ্চম জাতীয় সার্ফিং টুর্নামেন্টের ফাইনালে মেয়েদের বিভাগে এবার প্রথম হয়েছে মেহেরাজ। তুখোড় সার্ফারে পরিণত হওয়া এই কিশোরীর স্বপ্ন সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য ছিনিয়ে আনা।

গতকাল সৈকতে সি-গাল পয়েন্টে তিন দিনব্যাপী পঞ্চম জাতীয় সার্ফিং টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েদের বিভাগে রানারআপ হয়েছে আয়েশা আক্তার। তৃতীয় ও চতুর্থ হয়েছে রিফা আক্তার ও সুমি আক্তার। আসরের জুনিয়র বয়েজ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাগর হোসেন। রানারআপ হয়েছে আব্দুল হান্নান। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে জাহেদুল ইসলাম ও মো. জিয়া। সিনিয়র ম্যান ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন মো. ইউনুছ। রানারআপ হয়েছেন মো. মান্নান। তৃতীয় ও চতুর্থ হয়েছেন মো. সেলিম ও আব্দু শুক্কুর। প্রতিযোগিতায় চারটি বিভাগে অংশ নেন ৬৮ জন। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সার্ফিং সংস্থা ‘সার্ফিং দ্য নেশন’–এর প্রেসিডেন্ট টম বাউয়ারের নেতৃত্বে ১২ জন বিদেশি সার্ফার। টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি ও বাংলাদেশ সার্ফিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইউসুফ হারুন।

শবে মেহেরাজের বাড়ি কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়ার বাদশাঘোনা এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রের ঢেউয়ের চেয়ে জীবনের সঙ্গে বেশি লড়াই করতে হয়েছে তাকে। বাবা নিরুদ্দেশ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে সংসারে জোগান দিত সে। একসময় সার্ফিং শুরু করায় তার সামনে আসে বাধার পাহাড়। তবু হার মানেনি। বাধা উপেক্ষা করে সে আজ দক্ষ সার্ফার।

পঞ্চম আসরে মেয়েদের বিভাগে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ভীষণ খুশি শবে মেহেরাজ। অনুভূতি জানাতে গিয়ে সে বলে, ‘আজকের এই অর্জনটির জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। কঠোর পরিশ্রম আর অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তবে আজ পেরেছি।’

সে আরও বলে, ‘এ দেশে এখনো সার্ফিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বিদেশের মাটি থেকে দেশের জন্য গৌরব ছিনিয়ে আনতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু পদে পদে বিভিন্ন দপ্তরের অসহযোগিতা আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।’

৮ বছর আগে শবে মেহেরাজসহ আটজন মেয়ে একসঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বাংলাদেশ সার্ফ গার্লস অ্যান্ড বয়েজ ক্লাবের হয়ে সার্ফিং শুরু করেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অর্থভাবে ও নানা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে এরই মধ্যে তিনজন কিশোরী সার্ফিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ওই ব্যাচের পাঁচজন মেয়ে এখন নিয়মিত সার্ফিং করছে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় তারাও এখন হতাশ।

নারী সার্ফারদের নানা সমস্যা তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছেন এলিজাবেথ ডিকস্তা। এলিজাবেথ ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তিনি নারী সার্ফারদের বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, কিশোরী ও নারী সার্ফাররা সবক্ষেত্রে অবহেলার শিকার। অথচ তাঁরা সার্ফিংয়ে ক্ষেত্র বিশেষে ছেলেদের চেয়েও দক্ষ। নারী সার্ফারদের বিশ্বমঞ্চে পাঠানো গেলে নিশ্চিত তাঁরা দেশের জন্য অর্জন বয়ে আনবেন।