করোনাকালে মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিতে জামালপুরের তরুণ ইসমাইল হোসেন ফেসবুকভিত্তিক একটি রক্তদান গ্রুপ গড়ে তুলেছেন। নাম ‘স্বেচ্ছায় রক্তদানে জামালপুর’। এর মাধ্যমে করোনাকালে প্রায় এক হাজার রোগীকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগকালে এমন সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনেরা।
ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষের প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া ও সংগ্রহে আলাদা একটি ভালো লাগা কাজ করে। মুমূর্ষু রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্ত যেকোনো পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার মতো শান্তি ব্যক্ত করার নয়। রক্তের ব্যাগটা তুলে দেওয়ার পর পরিবারগুলোর মুখে কৃতজ্ঞতা আর পরিতৃপ্তির যে ছাপ দেখা যায়, তা অকৃত্রিম।
স্বেচ্ছায় রক্তদানে জামালপুর নামের গ্রুপটি থেকে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তদানের আহ্বান করা হয়। ইসমাইল হোসেনের রক্ত সংগ্রহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান দুরন্ত ইসলাম, মো. সজিব, মেহেদী হাসান, রবিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তুহিন আহমেদ, জামিল হোসেন, পারুল আক্তার, শামীম হোসাইনসহ অনেকেই। তাঁরা সবাই তরুণ শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই রক্ত দেন এবং সংগঠনের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করেন।
ইসমাইল জামালপুর সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের কুতুববাড়ি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার জন্য থাকেন জামালপুর শহরের পাঁচ রাস্তা এলাকার একটি মেসে। কৃষক পরিবারের সন্তান ইসমাইল বাড়ি থেকে লেখাপড়ার তেমন খরচ পান না। টিউশনি করে নিজের খরচ জোগান। একই সঙ্গে কিছু টাকা বাঁচিয়ে এ সংগঠনের পেছনে ব্যয় করেন।
একজন রোগীকে বাঁচাতে রক্ত লাগার খবর আসে ইসমাইল হোসেনের কাছে। কিন্তু তাঁর কয়েক দিন আগেই তিনি অন্য এক রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। ফলে তিনি রক্ত দিতে পারছিলেন না। করোনার কারণে রক্ত দেন, এমন কয়েকজন বাড়িতে চলে গেছেন।
আর যে দু-একজন ছিলেন, তাঁরা হাসপাতালে যেতে চাইছিলেন না। এ ব্যর্থতা তাঁকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রেরণা জোগায়। গত বছরের ১৩ মে তিনি ‘স্বেচ্ছায় রক্তদানে জামালপুর’ গড়ে তোলেন। এ গ্রুপের সদস্যসংখ্যা প্রায় চার হাজার। তাঁদের মধ্য থেকে নিয়মিত রক্ত দেন, এমন ১৫০ জনের একটি তালিকাও করা আছে। তাঁরা ডাক পেলে মানুষকে রক্ত দিতে ছুটে যান।
এ গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় বিনা মূল্যে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চালান। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে রক্তদানে উৎসাহী করেন। এ ছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কেও মানুষকে সচেতন করার প্রচার-প্রচারণা চালান। এ কাজে যে অর্থ ব্যয় হয়, সেটা নিজেরাই দেন। এ ছাড়া নিজের খরচে রক্ত দিতে যান। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ চালিয়ে নিতে গিয়ে আর্থিকভাবে হিমশিম খেতে হয়।