বিপণিকেন্দ্রের গাড়ি রাখার জায়গায় দোকান বরাদ্দ

গাড়ি রাখার জায়গায় দোকান নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিক। সম্প্রতি শাহ আমানত সুপার মার্কেটের নিচতলা থেকে তোলা। সৌরভ দাশ
গাড়ি রাখার জায়গায় দোকান নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিক। সম্প্রতি শাহ আমানত সুপার মার্কেটের নিচতলা থেকে তোলা।  সৌরভ দাশ

সিটি করপোরেশন বিপণিকেন্দ্রের নিচতলায় ২ হাজার ২৫০ বর্গফুট এবং দোতলার ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গা শামীম করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকায় সম্প্রতি বরাদ্দ দেয়। প্রতিষ্ঠানটি নিচতলায় দোকানের নির্মাণকাজ শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা এখলাছ উদ্দিন আহম্মদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় চারতলা বিপণিকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। তবে এ জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় আড়াই শ ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর দোকান রয়েছে।

সরেজমিন

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, তিন নির্মাণশ্রমিক নিচতলায় দোকানের নির্মাণকাজ করছেন। খালি জায়গায় আটটি দোকানের জন্য ইটের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজের কারণে এই জায়গায় গাড়ি রাখা যাচ্ছে না। এতে গাড়ি রাখার জায়গা কমে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা প্রথম আলোকে বলেন, দোকান নির্মাণের জন্য গাড়ি রাখার পুরো জায়গা তো নেওয়া হচ্ছে না। সেখানে গাড়ি রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। আর খালি জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার করা হতো।

ভবনের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০-২৫ বছর আগেকার কথা। তখন আমি ছিলাম না। তবে যতটুকু জানি, ওই সময়ে সিটি করপোরেশন কোনো ভবন নির্মাণের জন্য সিডিএর অনুমোদন নিত না।’

বাড়বে যানজট

নগরের নিউমার্কেট থেকে আমতলা এলাকা বাণিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম। এখানে নগরের সবচেয়ে বড় খুচরা ও পাইকারি বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, শাহ আমানত সুপার মার্কেট ও সিটি করপোরেশন পরিচালিত দুটি নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজে এখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসেন। কিন্তু তাঁদের জন্য গাড়ি রাখার সুবিধা আছে নিউমার্কেট, শাহ আমানত সুপার মার্কেট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের গোলাম রসুল মার্কেটে।

এখন শাহ আমানত সুপার মার্কেটে গাড়ি রাখার জায়গায় দোকান নির্মাণ করার কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

শাহ আমানত সুপার মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারাদার জাহেদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দোকান নির্মাণের কারণে এখন ৩৫০টির বেশি মোটরসাইকেল রাখা যাবে না। আগে এক হাজার গাড়ি রাখা যেত। এখন বাড়তি গাড়িগুলো রাস্তার ওপর থাকলে যানজটের ভোগান্তি বাড়বে।

রেয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, মেয়র একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি নিশ্চয়ই জনস্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন।

পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

নিচতলা ও দোতলার খালি জায়গায় বরাদ্দ দিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। মেয়রের সঙ্গে দেখা করলেও কোনো সমাধান পাননি তাঁরা।

বিপণিবিতানের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, গাড়ি রাখার জায়গা এবং দোতলার উন্মুক্ত পরিবেশ দেখে দোকান ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে দোকান বরাদ্দ দিয়েছে করপোরেশন। এর কারণে মার্কেটে আলো-বাতাস আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ক্রেতারা কেনাকাটা করতে এখানে আসবেন না। আর কখনো আগুন ও ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে বিপদ নেমে আসবে।

‘করপোরেশন কাজটি ঠিক করেনি’

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি রাখার জায়গায় দোকান বরাদ্দ দিয়ে সিটি করপোরেশন মোটেই ঠিক কাজ করেনি। এই নগরে যে যার মতো করে আইন ভঙ্গ করে চলেছে। সবাই বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু কাজ করার সময় নিয়ম ভঙ্গ করে চলেছেন। এভাবে চলতে থাকলে নগরকে তো বাঁচানো যাবে না।

সুভাষ বড়ুয়া বলেন, এত বড় একটি বিপণিবিতান। এখানে শত শত মানুষ আসেন। তাঁরা গাড়ি কোথায় রাখবেন? আর গাড়ির রাখার জায়গায় দোকান করলে তা তো সিডিএর দেখার কথা। তারা দেখছে না কেন? যদি সিডিএর অনুমোদন না নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়, তাহলে তো আরও বড় অন্যায়।