নওগাঁয় ইউপি নির্বাচন

‘বিদ্রোহী’ কাঁটায় বিদ্ধ আওয়ামী লীগ

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টির মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন। এসব ইউপিতে দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। অথচ ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার ১২টির মধ্যে ১১ ইউপিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছিলেন।

দ্বিতীয় দফায় গতকাল বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে রাতে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ভোট গ্রহণকালে কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল। তবে ভোট গণনার সময় উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো। ভোট পড়েছে ৭৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

শৈলগাছী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন ৬৭৯ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এলাকায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই প্রার্থী পান ২ হাজার ৮৯১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল গফুর সরদার পেয়েছেন ২ হাজার ২১২ ভোট। গত নির্বাচনে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগর প্রার্থী ছিলেন তিনি। এখানে আওয়ামী লীগের আবদুর রাজ্জাক পান ১ হাজার ২৭০ ভোট। এ ইউনিয়নে ছয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি চতুর্থ স্থানে।

শৈলগাছী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এবার এলাকায় অনেকটা অপরিচিত ও অযোগ্য একজন ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আবদুর রাজ্জাককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মীই তাঁর পক্ষে মাঠে নামেননি। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় অনুমেয় ছিল। ভোটের ফলাফল বেরোনোর পর তার প্রমাণ মিলল।

পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক বলেন, দলের নেতাদের মুখে মধু ছিল। কিন্তু অন্তরে বিষ পুষে রেখেছিল। ওপরে ওপরে নৌকার পক্ষে থাকলেও ভেতরে ভেতরে অন্যের পক্ষে কাজ করায় নৌকার পরাজয় হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার দুবলহাটি, হাঁসাইগাড়ী, হাপানিয়া, কীর্তিপুর ও বক্তারপুর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। দুবলহাটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মখলেছুর রহমান ৭৬৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিনি পান ৩ হাজার ৭৬৯ ভোট। তাঁর নিকটতম আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আনিছুর রহমান পেয়েছেন ৩ হাজার ৩ ভোট। এখানে নৌকার প্রার্থী অভিজিৎ মজুমদার পান ২ হাজার ২৩৪ ভোট। এ ইউনিয়নে সাত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় স্থানে।

কীর্তিপুর ইউপিতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নাজমুল হক ১ হাজার ২৬৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পান ২ হাজার ৫৫৬ ভোট। তাঁর নিকটতম বিএনপি নেতা আলমগীর কবীর পেয়েছেন ৪ হাজার ২৮৭ ভোট। এ ইউনিয়নে পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতোয়ার রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৮৮৩ ভোট।

বক্তারপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার কামাল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সারওয়ার কামাল ২০৯ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি পান ৩ হাজার ৭৫৯ ভোট। তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল লতিফ পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৫০ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নাজমুল হুদা পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ ভোট।

হাপানিয়া ইউপিতে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান মোস্তাক আহমেদ ১ হাজার ২৬৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৩৬ ভোট। তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগের আফছার আলী পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৭২ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রেজাউল করিম ১ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়েছেন।

হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোল্যা ৪৮০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। বিজয়ী জসিম উদ্দিন পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৭৬। তাঁর নিকটতম বিএনপি নেতা জালাল হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৯৬ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল জলিল পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৯৩ ভোট।

অন্যদিকে ছয়টি ইউপিতে জয় ছিনিয়ে এনেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাঁরা হলেন তিলকপুর ইউপিতে রেজাউল করিম, বর্ষাইলে শহিদুল ইসলাম, শিকারপুরে কাজী রুকুনুজ্জামান, চণ্ডীপুরে খুরশিদ আলম, বোয়ালিয়ায় আফেলাতুন নেছা ও বলিহার ইউপিতে মাসরেফুর রায়হান মাহিন।

ছয়টি ইউপিতে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। এর বাইরেও আরও কারণ রয়েছে। এসব বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।