দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা। এতে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান হাওলাদার।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান ব্যাপারীসহ সাত নেতা। মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার। তবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার চোকদার, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নেয়ামত সিকদার, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক চিনু বেগম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান ব্যাপারীর স্ত্রী।
পরে চিনু বেগম ও নেয়ামত সিকদার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবুল বাসার চোকদারকে সমর্থন করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান ব্যাপারী। তাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে থাকেন।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ১৫ জানুয়ারি পৌরসভার পূর্ব গৈড্ডা এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১৭ জানুয়ারি রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান হাওলাদারের বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ওই রাতেই উপজেলা আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান ব্যাপারীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নেয়ামত সিকদারের বাসভবনে ভাঙচুর করা হয়। এ দুটি ঘটনায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সমর্থক আকাশ ঢালী নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে স্থানীয় সাংসদ নাহিম রাজ্জাক স্থানীয় নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা সভা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল মেলেনি।
এ সম্পর্কে মান্নান ব্যাপারী বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন সঠিক হয়নি। তাই দলের একজন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁকে আমার মতো অনেক নেতা সমর্থন দিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল বাশার চোকদার বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তখন স্থানীয় সাংসদ ও নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পরের নির্বাচনে তাঁকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ প্রতিশ্রুতি রাখেননি। দলের নেতা-কর্মীদের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন। তাঁরা সম্মিলিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করছেন। মারধর করছেন।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, যাঁরা দলীয় পদে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগের সভা করা হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে নৌকা প্রতীকের পক্ষে থাকার জন্য।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আল নাসিফ বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর সমর্থকেরা কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছেন। কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।