বিদায় অনুষ্ঠানে কাঁদলেন এসপি হারুন, বললেন ষড়যন্ত্র

বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগতাড়িত এসপি হারুন। ছবি: ইউএনবি
বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগতাড়িত এসপি হারুন। ছবি: ইউএনবি

চাঁদাবাজি ও ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর বদলি হওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জ থেকে বিদায় নিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন তিনি।

দুপুরে শহরের মাসদাইর পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এসপি হারুনকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় তিনি কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তাঁর দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তদন্ত হলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।

এসপি হারুন বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে কাজ করে সমালোচিত হয়েছি। অপরাধী যখন ফেঁসে যায়, মামলা হয়, গ্রেপ্তার হয় অথবা তদবির করে ব্যর্থ হয় তখন তারা একটিই কথা বলে পুলিশ আমার কাছ থেকে টাকা চেয়েছে- সম্ভবত পুলিশের ওপর দোষ চাপানো এটাই সহজ কাজ।’

পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বিদায়ী এসপি হারুন বলেন, ‘আমার কোনো সহকর্মীর দিকে কেউ পিস্তল তাক করবে সেটা তো হতে পারে না। তা ওই ব্যক্তি কত বড় সম্পদশালী বা শক্তিশালী সেটা দেখিনি। বিধি মোতাবেক চ্যালেঞ্জ করে তার গাড়ি আটকিয়ে মাদক ও গুলি পেয়েছি। সে অস্ত্রসহ পালিয়েছে। আইন মোতাবেক মামলা হয়েছে, পুলিশ রেইড দিয়েছে। কিন্তু বলা হয়েছে, টাকা দাবি করেছি।’

হারুন বলেন, আমরা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। গুলশান ডিসিকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। রাসেলের ছেলে বলেছিল অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করবে। তাই তাকে আনা হচ্ছিল, তখন তার মা বললো, তার ছেলে বিদেশে লেখাপড়া করে এসেছে তাকে একা ছাড়বে না। তিনি নিজেও আসতে চান। আমরা তাঁকেও সম্মানের সঙ্গে সাথে করে নিয়ে এসেছি। পরের দিন পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার হাশেম সাহেব আসলেন। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন রাসেলের কাছে অস্ত্র থাকা নিরাপদ নয়। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দিয়ে তার ছেলের বউ ও নাতিকে নিয়ে যান। এগুলো আপনারা সবই জানেন, তবুও আমি বললাম।’

ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান সিনহাকে আটকের প্রসঙ্গ টেনে হারুন বলেন, ‘এর আগে আনিসুর রহমান সিনহাকে আটক করেছিলাম। তাঁর বিরুদ্ধে ৬৭টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। পরদিন তাঁকে আদালতে প্রেরণ করব। কিন্তু তিনি ব্যবসায়ী, ভিআইপি মানুষ। তাঁকে আদালতে পাঠানো হলে তাঁর সম্মান নষ্ট হবে। তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কাটাতে এক সপ্তাহের সময় নিলেন। আমরা সম্মানিত ব্যক্তি বলে সেদিনই তাঁকে ছেড়ে দিই। তিনিও মুচলেকা দিয়েছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সবগুলো মামলায় আদালতে হাজির হবেন।’

আনিসুর রহমান সিনহা কিংবা পারটেক্স গ্রুপের কেউ অভিযোগ দেয়নি দাবি করে বিদায়ী এই এসপি বলেন, অভিযোগ তুলেছেন ওই পক্ষটি। যে পক্ষটি আমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। আমার কারণে যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা করতে পারেনি। সেই তারা অভিযোগ দিয়েছে। এসব কিছু তদন্ত হলেই বের হয়ে আসবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।

বিদায় অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এসপি হারুন। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি তুলে ধরে হারুন বলেন, ‘আমি আসার পূর্বে নারায়ণগঞ্জ কেমন ছিল? এখন কেমন আছে তা আপনারা অবগত আছেন। আমি কাউকে ছাড় দিই নাই। জেলার প্রত্যেকটি সংসদ সদস্য ও মেয়র আমাকে সাহায্য করেছেন। তারা কেউ কখনো বাধা দেয়নি। তদবির করেনি। তাই আমি অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাই আমি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।’ যেখানেই যাবেন সেখানেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জামায়াত-শিবির আমার চাকরি খেয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবার চাকরিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সারা জীবন আমি স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব।

গত ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়। হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাঁদার জন্য তিনি একাধিক শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুন: