মঞ্চের ডায়াসে রাখা টেবিলে দাঁড়িয়ে একটি রোবট। নাম তার ইয়ানশী। হেলেদুলে সে এগিয়ে এল টেবিলের কোনায়। দুই পাশে হাত ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ইয়ানশী বলে, ‘আগামী পৃথিবী বিজ্ঞানের হোক, তোমাদের হোক। আমি বিজ্ঞানচিন্তা-বিকাশ বিজ্ঞান জাতীয় উৎসবের জাতীয় পর্বের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মাঠে এভাবেই বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্ব শুরু করে মোবাইল হিউম্যানয়েড রোবট ইয়ানশী। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক মাসিক পত্রিকা ‘বিজ্ঞানচিন্তা’ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম আলো বন্ধুসভা। এবার উৎসবের স্লোগান, ‘বিজ্ঞানে বিকাশ’।
আজ জাতীয় পর্বে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শন করছে। সেকেন্ডারি ও জুনিয়র—দুই ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
জাতীয় পর্বের উদ্বোধনের আগে জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। চূড়ান্ত পর্ব আজ। ৩০ বছর আগে থেকে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে বিজ্ঞানে আগ্রহী শিক্ষার্থীর শতকরা হার আবার বাড়ছে। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ। প্রজন্ম, যারা বড় হচ্ছে তাদের সবার মধ্যে বিজ্ঞান চিন্তাটা শুরু করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার কাজী শামীম ফরহাদ বলেন, ‘আমি এ বিজ্ঞান উৎসবের সাফল্য ও শুভকামনা করছি।’
এরপরই রোবট ইয়ানশী উৎসবের উদ্বোধনী ঘোষণা করে। ইয়ানশীকে বানিয়েছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইউবিটেক। ইউবিটেকের বাংলাদেশের পার্টনার এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক রঞ্জন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, উৎসবে আলফা নামে আরও একটি রোবট প্রদর্শিত হবে। আলফা গানের সঙ্গে নেচে দেখাবে।
উৎসবের উদ্বোধনীতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার কাজী শামীম ফরহাদ এবং বিজ্ঞানচিন্তার পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন ‘বিজ্ঞান চিন্তা’র সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.)) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম, ফিজিকস অলিম্পিয়াডের কোচ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস ও মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক ও বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল ঢাকায় আঞ্চলিক পর্বের মধ্য দিয়ে এই ‘বিজ্ঞানচিন্তা-বিকাশ বিজ্ঞান উৎসব’ শুরু হয়। ৭টি আঞ্চলিক পর্ব শেষে আজ জাতীয় পর্ব হচ্ছে। আজ জাতীয় পর্বে কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রকল্প প্রদর্শনী, ম্যাজিক, বিজ্ঞানের খেলা, তারকাকথন, গানসহ থাকছে নানা আয়োজন।
সকাল আটটা থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উৎসবস্থলে হাজির হয়ে নিবন্ধন করে। কেউ কেউ অভিভাবকের সঙ্গে এসেছে।
সিলেটের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসেছে ১১ শিক্ষার্থী। তাদের একজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা তাবাসসুম। তার প্রজেক্টের নাম ওয়েস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
ফাইজা প্রথম আলোকে বলে, পানির অপর নাম জীবন। সে গুগল থেকে জেনেছে, বিবিএসের জরিপে এসেছে, ঢাকায় বিপুল পরিমাণ পানি নষ্ট হয়। সে চিন্তা থেকেই পানি রিসাইক্লিংয়ের প্রকল্প বানিয়েছে। তার মতে, আমাদের পানির পুনর্ব্যবহার করা উচিত।
উৎসবে বিজ্ঞান প্রজেক্ট ও কুইজ প্রতিযোগিতা ছাড়া থাকছে ডাকটিকিট প্রদর্শনী, ওয়াটার রকেট, প্রশ্নোত্তর পর্ব, দাবাসহ মজার মজার সব আয়োজন। বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্বে দুটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে—বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতা।