নারায়ণগঞ্জে ‘মৃত’ কিশোরীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য আরও সময় পেলেন নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
অনুসন্ধানের জন্য এক মাস সময় চেয়ে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার সময় মঞ্জুর করেন। হাইকোর্ট আগামী ৫ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রেখেছেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘটনা অনুসন্ধান করে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। সে সময় ১৯ নভেম্বর (আজ) পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রেখেছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে আজ বিষয়টি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান শেষ করার জন্য আরও এক মাস সময় চাওয়া হয়। হাইকোর্ট সময় মঞ্জুর করেন।
হাইকোর্টে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। এ সময় রিট আবেদনকারী আইনজীবী আসাদ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইনজীবী আসাদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এক মাস সময় চান। হাইকোর্ট সময় মঞ্জুর করে আগামী ৫ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। এই সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হাইকোর্টে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে হবে।
গত ৪ জুলাই ১৫ বছর বয়সের এক কিশোরী নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে না পেয়ে প্রথমে থানায় জিডি ও পরে মামলা করেন।
ওই মামলায় পুলিশ আবদুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা ‘স্বীকার করে’ গত ৯ আগস্ট আদালতে জবানবন্দি দেন।
তবে ‘অবিশ্বাস্যভাবে’ ঘটনার ৫১ দিন পর গত ২৩ আগস্ট ওই কিশোরী ফিরে আসে।
পরে সে জানায়, এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার ভাড়া বাড়িতে সংসার করছে সে। আদালত পরে ওই কিশোরীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন।
মেয়েটি ফিরে আসার পর ওই মামলার আসামি আবদুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেছিলেন, মারধর করে তাঁর ছেলেসহ অন্যদের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে মেয়েটির বাবার করা মামলার নথিপত্র তলব ও তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন (রিভিশন) করেন।
গত ২৭ আগস্ট শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আসামিদের গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি রেকর্ড বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে মামলার সিডি (মামলার নথি) নিয়ে ওই দিন আসতে বলা হয়।
ধার্য তারিখে দুই কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।