ঠাকুরগাঁও সদর

বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা

নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় ১৫ এপ্রিল রাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন নুর করিম।

বিএনপি
বিএনপি

সম্মেলনে হলেও হয়নি কমিটি। দেওয়া হলো ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের ঘোষণা। সেটাও হলো স্থগিত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও সেটাও আবার করা হলো স্থগিত। এভাবেই থেমে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গত ৩১ মার্চ শহরের সাধারণ পাঠাগার মাঠে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। সম্মেলনে যোগ দেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

বেলা তিনটার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সে সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্মেলনের যে মূল কাজ নতুন একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা, সেটা আপনাদের মতামত নিয়েই করব। তবে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। ৯ এপ্রিল কাউন্সিলদের আবার আসতে হবে। এসে আপনারা নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দেবেন।’ পরে তিনি ভোট পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন। এ নিয়ে ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে সম্মেলন হয়ে গেছে, ‘কমিটি নির্বাচন হবে ১০ দিন পর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পদপ্রত্যাশীরা গণসংযোগ শুরু করে দেন। তাঁরা কাউন্সিলরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের পক্ষে সমর্থন পেতে চেষ্টা শুরু করেন। এ অবস্থায় ১২ এপ্রিল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. নুর করিম। তফসিল অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় ১৫ এপ্রিল রাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন নুর করিম। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রত্যাশী আবদুল হামিদ তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘সকাল-সন্ধ্যা কয়েক শ নেতা-কর্মীর ফোন পাচ্ছি। কী বলব? কী বোঝাব? ভেবে পাচ্ছি না।’ অন্যদিকে রাতে উপজেলা বিএনপির ১৭টি ইউনিটের নেতারা আবদুল হামিদকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিতে জেলা বিএনপি বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

এ সম্পর্কে আবদুল হামিদ বলেন, ‘উপজেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান, তাঁদের মতামতেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক। এটা আমারও চাওয়া।’

সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এবার সভাপতি পদপ্রত্যাশী এ এন এম রোকন উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিবকে সত্যি কথাগুলো বলা উচিত। তিনি যখন জেলা সভাপতি ছিলেন, তখন সরাসরি সমস্যাগুলো দেখে তা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু এখন দূরে অবস্থান করার কারণে তাঁকে অন্যের মাধ্যমে সমস্যাগুলো জানতে হচ্ছে। দলের ভেতরে থাকা স্বার্থান্বেষীরা তাঁকে নিজের মতো করে তথ্য দেন। এতেই দলের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

রোকন উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই হলে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাবে। ফলে দল আরও সংকটে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিলেও তা সাময়িক সময়ের জন্য।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. নুর করিম বলেন, ‘আমরা প্রথমে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে জোর দিচ্ছি। সমঝোতার জন্যই দলের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সেটা না হলে ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।’