বাড়ি পৌঁছাল হাদিসুরের লাশ, শেষবারের মতো দেখতে মানুষের ভিড়

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রাত পৌনে ১০টার দিকে বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নে হাদিসুরের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের দরজা ধরে স্বজনেরা বিলাপ করছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের (৩২) লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। আজ সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর লাশ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নে তাঁর নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। এর আগে বেলা দুইটার দিকে তাঁর লাশ নিয়ে বরগুনার পথে রওনা হন স্বজনেরা। এদিকে হাদিসুরের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছানোর পরে মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ভাই আমাকে কেন ডাকে না। ভাই কি আমাকে আর ডাক দেবে না। ভাই আমার ঠান্ডা সহ্য করতে পারত না। সেই ভাই আজ লাশ হয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বাড়ি আসছে। ভাই আমার জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।’

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাড়ি পৌঁছানোর পরে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে

এ সময় মেজ ভাই তারিকুল ইসলাম লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দরজা ধরে বিলাপ করতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ভাইয়া কোথায় গেলি তুই? তোর ওখানে থাকার কথা না। তোকে তো আমার নিয়ে আসার কথা। তোকে আমি আগাইয়া দিয়েছিলাম। তুই আমাদের জন্য কতই না কষ্ট করছিস।’ সন্তানের লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পরে শোকে মুহ্যমান মা-বাবা শুধু ফ্যালফ্যাল করে প্রিয় সন্তানের মুখটি খুঁজছিলেন।

এর আগে দুপুর থেকেই হাদিসুরকে শেষবারের মতো দেখতে তাঁর বাড়িতে ভিড় বাড়তে থাকে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাঁর বাড়িতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাদিসুরের এই মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের। এলাকার একজন মেধাবী হারিয়ে তাঁরা শোকাহত বলেও জানান। প্রতিবেশী জসীম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাদিসুর প্রান্তিক গ্রামে থেকেও আলো ছড়িয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’

শোকে মুহ্যমান মা-বাবা শুধু ফ্যালফ্যাল করে প্রিয় সন্তানের মুখটি খুঁজছিলেন

বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাত পৌনে ১০টার দিকে হাদিসুরের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছেছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় বাড়িসংলগ্ন মাঠে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তারপর দাদা-দাদির কবরের পাশে হাদিসুরকে দাফন করা হবে।

এর আগে আজ দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে তুর্কি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হাদিসুরের লাশ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা লাশ গ্রহণ করেন। ছেলের লাশ দেশে আসার খবরে মা-বাবার আহাজারিতে হাদিসুরের গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দুপুর থেকেই হাদিসুরকে শেষবারের মতো দেখতে তাঁর বাড়িতে ভিড় বাড়তে থাকে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা

স্বজনেরা জানান, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। সেখানে নোঙর করা অবস্থায় ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলায় নিহত হন হাদিসুর। এরপর বন্দরের আশপাশ এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের সহায়তায় ৩ মার্চ জাহাজে থাকা ২৮ নাবিককে উদ্ধার করে বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।