প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
গত মার্চ থেকে খননকাজ শুরু হয়ে জুনের শেষ নাগাদ ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
মাগুরার মহম্মদপুরে খাল পুনঃখননের মাটি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। খালের মাটি স্তূপ হয়ে আছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাটে। মাটির স্তূপের কারণে কেউ কেউ জমি চাষ করতে পারছেন না, কারও বাড়ির উঠানে মাটির ঢিবি হয়ে আছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, তাঁদের মাটি সরাতে দেওয়া হচ্ছে না, আবার সরকারের পক্ষ থেকেও মাটি সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে কয়েক মাস ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তাঁরা।
এই মাটি নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মধ্যে। সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি চিঠিতে দুটি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মাটির স্তূপের কারণে কেউ কেউ জমি চাষ করতে পারছেন না, কারও বাড়ির উঠানে মাটির ঢিবি হয়ে আছে।
মাগুরা পাউবো সূত্র বলছে, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি মহম্মদপুর উপজেলার এমডি-১ খাল পুনঃখনন শেষ হয়েছে। উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর নবগঙ্গা নদী থেকে শুরু করে চুড়ারগাতি হয়ে মধুমতী নদীতে মিলিত হয়েছে খালটি। প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত মার্চ থেকে খননকাজ শুরু হয়ে জুনের শেষ নাগাদ ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
২২ আগস্ট বিনোদপুর ইউনিয়নের চর রাঢ়িখালী ও কাওড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাটির স্তূপ জমে আছে খালের দুই পাড়ে। লোকজনের বাড়ির উঠানে ও রাস্তার ওপর মাটি পড়ে আছে। কাওড়া গ্রামের চাষি শেখ মিরান বলেন, ‘৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি টয়লেট বানিয়েছিলাম। সেটা মাটিচাপা পড়েছে, ব্যবহার করতে পারছি না। বাড়িতে কয়েকটা গরু আছে, সেগুলো নড়াচড়া করানোর জায়গাটুকুও নেই, উঠানভর্তি মাটি।’
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মে মাসের দিকে মাটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগের বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। অনেক জায়গায় মাটির কারণে রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনটি ভাটাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের ভিত্তিতে কিছু জায়গা থেকে মাটি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ৫ জুন এমডি-১ খালের মাটি ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দেন মাগুরা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমরান সরদার। সেখানে বলা হয়, পাউবোর হিসাব অনুযায়ী, এই খাল থেকে উত্তোলিত মাটির পরিমাণ পাঁচ লাখ ঘনমিটার। প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা দরে যার মূল্য দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকা। মাটি বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য ওই চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
গত ৯ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয় মাগুরা পাউবোকে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আফাজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘এমডি-১ খালের কোনো মাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিক্রি করা হয়নি। খাল খননের বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এই মাটি বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব। সেখানে আরও বলা হয়, গত পাঁচ বছরে মাগুরায় অন্তত এক ডজন খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সেসব খালের মাটি কত টাকা বিক্রি করা হয়েছে, সে তথ্য জানতে চেয়েছে জেলা প্রশাসন।’
জানতে চাইলে মাগুরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, খাল পুনঃখননের পর মাটি দুই পাড়েই রাখা হয়। মানুষের জায়গায় মাটি থাকলে সেটা তারা কাজে লাগায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরে লাগলে তারা নিয়ে যায়। এর আগে যেসব খাল পুনঃখনন করা হয়েছে, সেগুলোর মাটি ওভাবেই রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, পাউবোর হিসাবে সেখানে অর্ধকোটি টাকার মাটি আছে। ফলে তাদের সেই মাটি বিক্রি করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এর আগে যেসব খাল পুনঃখনন করা হয়েছে, সেগুলোর মাটি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।