করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দেওয়া লকডাউনে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। এ কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের চাপ বেড়েছে। এতে ফেরিতে গা ঘেঁষে যাত্রীরা পদ্মা পার হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। এতে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানে করে যাত্রীরা এসে পাটুরিয়া ঘাটে জড়ো হচ্ছে। এরপর তারা পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। অতিরিক্ত গাড়ি ও যাত্রীর চাপে ফেরি পারাপারে হিমশিম অবস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি)। এর সঙ্গে পণ্যবাহী গাড়ির চাপ তো আছেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত গাড়ি পার করায় ঘাট এলাকায় তিন শতাধিক পণ্যবোঝাই গাড়ি আটকে আছে।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে করে যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছে। এসব ছোট গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা ফেরিতে ওঠে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়ায় যাচ্ছে। আবার অনেকে ছোট গাড়ি নিয়েই ফেরিতে উঠছে। তবে এর আগে ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকতে হয় এসব গাড়িকে। প্রতিটি ফেরিতে গা ঘেঁষে কেউ মাস্ক পরে, আবার কেউ মাস্ক ছাড়া পদ্মা নদী পার হচ্ছে।
পণ্যবাহী যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে পাটুরিয়া প্রান্তে। এসব যানবাহন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পাটুরিয়ায় এসে আটকা পড়ছে। ছোট গাড়ি ও যাত্রীর চাপের কারণে এসব পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় ঘাট এলাকায় আটকে থাকতে হচ্ছে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন–সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে সরকার। এতে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রা করছে ২১ জেলার মানুষ।
বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় কথা হয় ফরিদপুরগামী ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি ঢাকার মগবাজারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, কে জানে! তাই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’
ঢাকার সাভারে কাগজের কার্টুন তৈরির কারখানায় কাজ করেন আমিনুল ইসলাম। রাজবাড়ীর পাংশায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, সাভারের নবীনগর থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে অন্য যাত্রীর সঙ্গে প্রাইভেট কারে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। এরপর তিনি সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিশকায় ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কাজকর্ম থাকবে না। বেকার বসে সাভারে থেকে লাভ কী? খরচও বেশি। গ্রামে পরিবারের সাথে থাকি গিয়া।’
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) কে এম মেরাজ বলেন, সকাল থেকেই ঘাট এলাকায় ছোট যান ও যাত্রীর প্রচণ্ড চাপ। এসব গাড়িসহ অনেকে ফেরিতে নদী পার হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরেই ঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার এই চাপ আরও বেড়েছে। ১৪টি ফেরি দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে পণ্যবাহী গাড়িও পার করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ফেরিতে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যাত্রীদের সতর্ক করা হলেও তারা তা মানছে না।