সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আসন পূর্ণ করে বাস-মিনিবাস চালুর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেওয়া যাবে না।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আসন পূর্ণ করে বাস-মিনিবাস চালুর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেওয়া যাবে না।

বাস-মিনিবাস চলাচলে আসছে নতুন সিদ্ধান্ত

কোথাও ভাড়ার তালিকা নেই। তাই আগের ভাড়া কতটা মানা যাবে, সেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের মাস্ক পরতে হবে। করোনাকালের আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে হবে। এসব শর্তে বাস-মিনিবাসের আসন পূর্ণ করে চলাচলের অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১ অথবা ২ সেপ্টেম্বর থেকেই নতুন নিয়মে বাস-মিনিবাস চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে।

তবে গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে সোচ্চার ব্যক্তি ও বিআরটিএর কোনো কোনো কর্মকর্তা পুরোপুরি আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, পরিবহনমালিক-শ্রমিকনেতারা বলছেন, আগের ভাড়ায় ফিরে যাবেন। কিন্তু অতীতে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের পর বাসভাড়া কমালে তা মানা হয়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া বিআরটিএর আসলে কিছু করারও নেই। ফলে স্বাভাবিক অবস্থা যাত্রীদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক হবে, সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ১ জুন থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখাসহ নানা শর্তে সীমিত আকারে তা চালু হয়। এ সময় বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা ১৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আসন পূর্ণ করে বাস-মিনিবাস চালানোর অনুমতি চান। বিনিময়ে বাড়তি ৬০ শতাংশ ভাড়া না নেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। ১৯ আগস্ট বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকেও মালিক-শ্রমিকেরা একই দাবি করেন। এরপরই সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নেয়।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আসন পূর্ণ করে বাস-মিনিবাস চালুর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রী ও শ্রমিকদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা কথা শুনতে চান না, এটা সত্য। কিন্তু সরকার কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

রাজধানীতে যাত্রীরা ঠেকায়

সাভার থেকে আসাদ গেট, নিউমার্কেট হয়ে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে আসে মৌমিতা, ঠিকানা, সাভার পরিবহন। এই তিন পরিবহনে করোনার আগে সাভার থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির ভাড়া নেওয়া হতো ৪০ টাকা। ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পর শতভাগ বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ৮০ টাকা।

মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে কেরানীগঞ্জের পথে চলে দিশারী পরিবহন। এখন বাসে উঠলেই সর্বনিম্ন ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। অথচ করোনার আগে চিড়িয়াখানা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এরই মধ্যে ঢাকার প্রায় বাস-মিনিবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে। এ জন্য বাড়তি ভাড়া বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।

পরিবহনমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাস-মিনিবাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার কোনো দরকার নেই। এ জন্যই তাঁরা আসন পূর্ণ করে চালাতে চাচ্ছেন।

মূল শঙ্কা ভাড়া নিয়েই

করোনা পরিস্থিতির আগে ঢাকায় কিলোমিটারপ্রতি মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা এবং বড় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা ভাড়া নির্ধারিত ছিল। দূরপাল্লার পথে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা। ঢাকায় সর্বনিম্ন ভাড়া আছে মিনিবাসে ৫ এবং বড় বাসে ৭ টাকা।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আইনে থাকলেও বাস-মিনিবাসে ভাড়ার তালিকা নেই। করোনাকালে যে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কমিয়ে কত টাকা করলে আগের অবস্থানে যাবে, সেটা অনেক যাত্রী ঠাহর করতে পারবেন না। আর সুযোগটাই পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা নিতে পারেন।

এ ছাড়া করোনার আগেই বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে চাপ দিয়ে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। চলতি বছরের শুরুতে ৪০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল বিআরটিএ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকারকে চাপ দেওয়া হবে বলে একাধিক পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা জানান।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটিই ভুল ছিল। কারণ, পরিবহনমালিকেরা করোনার আগে থেকেই সরকার-নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করতেন। তাই প্রথমে বাড়তি ভাড়া বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে যাত্রী পরিবহন করার অনুমতি পাওয়ার পর সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার বেশি যাতে কেউ আদায় করতে না পারেন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।