রাজশাহীর শিরোইল এলাকার শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনাল থেকে কয়েক শ বাস রাজশাহী জেলাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করে থাকে। প্রায় ২৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই টার্মিনালে কাদাপানি থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহান।
বর্ষা মৌসুমের কয়েক মাস পানি জমে থাকে বাস টার্মিনালে। ভেতরে বাস আসা–যাওয়া করায় কাদাপানি সৃষ্টি হয়। সেই কাদাপানি মাড়িয়েই যাত্রীদের বাসে উঠতে ও নামতে হয়। এতে তারা পড়ে দুর্ভোগে। আর কাদা লেগে বাসের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চললেও টার্মিনালে কোনো উন্নয়নকাজ হচ্ছে না। এমন খারাপ অবস্থা রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকার শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিরোইল এলাকার শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনাল থেকে কয়েক শ বাস রাজশাহী জেলাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করে থাকে। প্রায় ২৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই টার্মিনালে কাদাপানি থাকায় বাসগুলো পাশের রেলস্টেশন সড়কজুড়ে দাঁড় করানো থাকে। এতে ওই রাস্তায় যান চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
শুকনা মৌসুমে ধুলাবালু ওড়ে এবং বর্ষার প্রায় ছয় মাস টার্মিনালে কাদাপানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা অকার্যকর অনেক দিন ধরে। তাই এখানে যাত্রীরা খুব কম আসে। যারা আসে, তাদের কাদাপানি মাড়িয়ে বাসে উঠতে হয়।
বাসচালক, মালিক ও নেতাদের অভিযোগ, শুকনা মৌসুমে ধুলাবালু ওড়ে এবং বর্ষার প্রায় ছয় মাস টার্মিনালে কাদাপানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা অকার্যকর অনেক দিন ধরে। তাই এখানে যাত্রীরা খুব কম আসে। যারা আসে, তাদের কাদাপানি মাড়িয়ে বাসে উঠতে হয়। এতে অনেক সময় কাদাপানি লেগে যাত্রীদের কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। কাদাপানির জন্য তাদের গাড়ির অনেক সমস্যা হয়। মাঝেমধ্যে কাদাপানির জন্য বাসের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র নষ্ট হয়। বাস বারবার ধোয়ার জন্য খরচ বেশি হয়। টার্মিনালে যাত্রী না আসায় নগরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী তুলতে হয়। আবার যাত্রীদের টার্মিনালে আসার আগেই নামিয়ে দিতে হয়।
পরিবহননেতারা জানান, বাস টার্মিনালে থাকা প্রতিটি বাস থেকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা নেয়। কিন্তু তাঁদের সমস্যার সমাধান করে না। বারবার বলা ও চিঠি দেওয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া বাসগুলো টার্মিনালে এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কয়েকটি বাসের চাকা একেবারে কাদাপানির নিচে দেবে আছে। বাসগুলোতে চালক ও তাঁর সহকারীরা ইট দিয়ে বিশেষ রাস্তা তৈরি করে বাস থেকে নেমে যাচ্ছেন। দু-চারজন যাত্রীকেও কাদাপানি মাড়িয়ে বাসে উঠতে দেখা যায়। বাস টার্মিনাল পেরিয়ে অধিকাংশ গাড়ি রাস্তার জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে রেলস্টেশন এলাকার রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আবার বাস চলার সময় টার্মিনালে থাকা অন্য বাসগুলোয় কাদাপানি ছিটকে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে যাত্রীদের গায়েও কাদাপানি ছিটকে যাচ্ছে।
রাজশাহী–গোদাগাড়ী–আমনুরা পথের একটি বাসের সুপারভাইজার আবদুর রাজ্জাক। তিনি ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি জানালেন, করোনার সময়ে যাত্রী কম। বাস ধোয়া আর মেরামত করতেই সব খরচ হয়ে যায়। যাত্রীরা এখানে আসে না। তাদের রাস্তা থেকে যাত্রী তুলতে হয়। বাস টার্মিনাল পাকা হলে যাত্রীরা এখানে আসত। তাহলে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলতে হতো না।
বাসচালক বারেক মিয়াও একই দাবি করে বলেন, ‘আমরা তো বাসপ্রতি টাকা দিচ্ছি। সেই টাকাতেই এই জায়গাটা একটু পাকা যায়।’
মঙ্গলবার বাঘাগামী বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন আবদুল কুদ্দুস। জুতায় কাদা লেপটে ছিল। তিনি বলেন, শহরে নানা কাজে আসতে হয়। এ জন্য অন্তত টিকিট কাটার জন্য টার্মিনালে আসতে হয়। এই কাদার মধ্যে এখানে চলাফেরা খুব কঠিন। একটু অসতর্ক হলেই বিপদ হতে পারে। এই টার্মিনালে সংস্কারকাজ করা জরুরি।
টার্মিনালটির অবস্থা খুবই খারাপ। এখান থেকে নিয়মিত টাকা নিলেও আরডিএ দৃশ্যত কোনো কাজই করেনি। তাঁরা এ বিষয়ে অনেকবার মৌখিকভাবে বলেছেন, চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।মাহতাব আলী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজশাহী
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব আলী চৌধুরী বলেন, টার্মিনালটির অবস্থা খুবই খারাপ। এখান থেকে নিয়মিত টাকা নিলেও আরডিএ দৃশ্যত কোনো কাজই করেনি। তাঁরা এ বিষয়ে অনেকবার মৌখিকভাবে বলেছেন, চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে আরডিএ চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনালে টুকটাক কাজ সব সময়ই করা হয়। টার্মিনালে কাদা হওয়া বা পানি জমে থাকার সমস্যাটি তাঁরা দ্রুত নিরসন করে দেবেন। এ জন্য তাঁরা পরিবহনমালিকদের সঙ্গে বসবেন। চিঠির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে টার্মিনালটি পুরোপুরি পাকা করার প্রকল্প আপাতত তাঁদের পরিকল্পনায় নেই।