দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ। কর্মস্থলে রওনা দেওয়া মানুষেরা যানবাহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। আজ রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বার বনানী এলাকায়
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ। কর্মস্থলে রওনা দেওয়া মানুষেরা যানবাহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। আজ রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বার বনানী এলাকায়

বাস আটকে দেওয়া হচ্ছে বগুড়ায়, যাত্রীদের ভোগান্তি

ঈদের ছুটি কাটিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষ দূরপাল্লার বাসে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী এসব বাস বগুড়ায় আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এতে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীরা ট্রাক, মাইক্রোবাস, লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে ছুটছেন।

আজ রোববার সকাল থেকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বগুড়ার বনানী লিচুতলা মোড়, মাটিডালি মোড়, চারমাথা বাস টার্মিনাল ও মোকামতলা এলাকায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা বহু দূরপাল্লার বাস আটকে দিয়েছে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল বনানী লিচুতলা মোড়ে। এখানে সকাল থেকেই রাজধানীগামী মানুষের ঢল নামে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।

ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস আটকে দিচ্ছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে বগুড়ার বাইপাস সড়কের বেতগাড়ী এলাকায়

রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহানারা রহমান (৩৮)। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা শেষে রোববার একটি দূরপাল্লার বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী জামিল হোসেন ও দুই সন্তান জারা (৭) ও জাওয়াদ (৩)। মহাসড়কের লিচুতলা মোড়ে পুলিশ বাস আটকে দেওয়ার পর দুর্ভোগে পড়েন তিনি। শেষে জনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ায় অন্য যাত্রীদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

জাহানারা রহমান বলেন, ‘রোববার ব্যাংক খুলেছে। তাই দূরপাল্লার একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। মাঝপথে পুলিশ বাস আটকে দেওয়ায় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছি। বাধ্য হয়েই মাইক্রোবাসে রওনা দিলাম।’

ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথে বাস আটকে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ রোববার দুপুরে বগুড়ার বাইপাস সড়কের বেতগাড়ী এলাকায়

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার শামিম হোসেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। স্ত্রী আফরোজাকে সঙ্গে নিয়ে দূরপাল্লার বাসের আশায় বনানী লিচুতলা মোড়ে এলেও পুলিশ এখান থেকে বাস ঘুরিয়ে দেওয়ায় হতাশ তিনি। শামিম বলেন, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ সয়ে বগুড়ায় এসেছিলেন। ৩০০ টাকার ভাড়া গুনতে হয়েছিল ১২০০ টাকা। ভেবেছিলেন ফেরার পথে দূরপাল্লার বাস পাবেন। কিন্তু এখন ফেরার পথে একই অবস্থা।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কোমরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসা একটি দূরপাল্লার বাসে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন পোশাককর্মী লতিফা বেগম (৪২)। সঙ্গে পরিবারের ছয় সদস্য। লতিফা বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৬০০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছিল। পুলিশ গাড়ি আটকে দেওয়ার পর এখন মাইক্রোবাসে গাজীপুরে রওনা দিয়েছেন। সাতজনের গুনতে হচ্ছে সাত হাজার টাকা।

বাস না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। আজ রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের বনানী এলাকায়

হাইওয়ে পুলিশের গাড়িদহ ফাঁড়ির পরিদর্শক বানিউল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা দেড় শতাধিক দূরপাল্লার বাস বনানী লিচুতলা মোড়ে আটকে দেওয়া হয়। এরপর যে যেখান থেকে ছেড়ে এসেছিল, সেখানেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকেও বহু দূরপাল্লার বাস ছেড়ে এসেছে। তবে যাত্রী না থাকায় এসব বাস আটকানো হয়নি। যাত্রী নিয়ে কোনো বাস ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।