জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা থেকে রংপুরে যাওয়ার পথে বগুড়া বাসস্ট্যান্ডে ফেলে যাওয়া সেই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার পরীক্ষা করা হবে। গত রোববার ভোররাতে তাঁকে ট্রাক থেকে ফেলে যাওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওই ব্যক্তি বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর নমুনা পরীক্ষার জন্য গত বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি আছে বলে পরের দিন বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে জানানো হয়। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শ আসা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধানসহ পাঁচজন চিকিৎসক, আটজন নার্সসহ মোট ১৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির কাছ থেকে সবাইকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলছেন, ওই ব্যক্তির করোনাভাইরাস পজেটিভ ফল এলেও তাঁরা ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) আবার পরীক্ষা করাতে চান। তাই এখনই এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন না তাঁরা।
ট্রাক থেকে বাসস্ট্যান্ডে ফেলা যাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখন তিনি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন। এ সময়ের মধ্যে অনেকে তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন।
ওই রোগির সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করা এক স্বজন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্য রোগীদের কাছ থেকে তাদের রোগীকে আলাদা করা হয়। এ ছাড়া রোগীর সংস্পর্শে না থাকার জন্যও সতর্ক করা হয়। চিকিৎসকেরা তাদের বলেছেন, রোগীর একটু সমস্যা আছে। কেউ তাঁর কাছে যাবেন না। একটু দূরে থাকবেন।
বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন বলেন, ওই রোগীকে আইসোলেশনের অন্য রোগীদের থেকে আলাদা রাখা হয়েছে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, আইইডিসিআর থেকে এখনো লিখিতভাবে জানানো হয়নি। মৌখিকভাবে জেনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মৌখিক কোনো বিষয় এভাবে গণমাধ্যমে বলতে পারি না। তবে আজ আইইডিসিআরের একটি দল বগুড়ায় আসছেন। তাঁরা বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারবেন।'
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ আজ সকালে প্রথম আলেকে বলেন, বুকে ব্যথা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা ওই রোগীকে প্রথমে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হৃদরোগ বিভাগের প্রধানসহ পাঁচজন চিকিৎসক, ৮ জন নার্সসহ ১৬ জন ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন। তাঁর শরীরে করোনা শনাক্তের বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার মৌখিকভাবে হাসপাতাল প্রশাসন জানতে পারে। তখন ১৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
ওই রোগীর এক স্বজন বলেন, রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সবজির আড়তে কাজ করেন ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। গত শনিবার রাতে ট্রাকে করে রংপুরের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা দেন তিনি। ট্রাকে আরও ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী ছিলেন। পথে তাঁর শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ট্রাক থেকে তাঁকে বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে ফেলে যাওয়া হয়।
ওই ব্যক্তিকে বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে পুলিশের সহায়তায় একজন ভ্যানচালককে ডেকে তাঁর ভ্যানে তুলে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। তাঁর ঠাঁই হয় প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই দিনই একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে পাঠানো হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে হৃদরোগ বিভাগে গত সোমবার পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত সোমবার বিকেলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো দরকার। তাহলে যেসব ব্যক্তিরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া যেত।