মাহমুদা হত্যায় নিরাপত্তাকর্মীর জবানবন্দি

বাবুলের বাসায় নিয়মিত আসতেন তাঁর স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি এহতেশামুল

মাহমুদা খানম মিতু
ছবি: সংগৃহীত

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহেতশামুল হক ওরফে ভোলা।

আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে বাবুলের ভাড়াবাসার নিরাপত্তাকর্মী ও মামলার সাক্ষী আবদুস সাত্তার মোল্লার দেওয়া জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে আসে। এর আগে এহতেশাম তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বাবুলের নির্দেশে তাঁর স্ত্রীকে খুন করা হয়।

চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালে বাবুল আক্তার নগরের ওআর নিজাম রোডের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভাড়া থাকতেন। আবদুস সাত্তার মোল্লা সেই বাসার নিরাপত্তাপ্রহরী।

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরে মাহমুদা খুন হন। এর কিছুদিন আগে থেকে চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় এহতেশাম বাবুলের তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। মাহমুদা হত্যাকাণ্ডে বর্তমানে তিনি কারাগারে।

আবদুস সাত্তারের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বাবুলের বাসার নিরাপত্তাকর্মী সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বাবুলের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এহতেশামুল। তাঁরা দুজন বাসায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করতেন। দু-এক দিন পরপর এহতেশাম বাসায় আসতেন। আবার বাবুল ও এহতেশাম দুজন একসঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন।

নিরাপত্তাকর্মীর এই জবানবন্দির আগে গত ২৩ অক্টোবর এহতেশামুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে এহতেশাম বলেন, বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তাঁর সোর্স ছিলেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। কামরুলের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল এহতেশামের। কামরুল তাঁকে বাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
আদালত সূত্রের ভাষ্য, জবানবন্দিতে এহতেশাম আরও বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন তিনি। কামরুলও শুরুতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে রাজি ছিলেন না। তাঁকে এ কাজ না করলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। যার কারণে কামরুল ও এহতেশাম রাজি হন।

মাহমুদা হত্যার পর ২০১৬ সালের ২৭ জুন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন এহতেশামুল হক। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এদিকে মাহমুদার বাবার করা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পান এহতেশামুল। মেয়াদ শেষ হলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২২ অক্টোবর বেনাপোল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম। তখন তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

এদিকে বাবুলের করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় গত বছরের মে মাসে। নারাজি আবেদন করলে আদালত বাবুলের করা মামলাটিও পিবিআইকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। বাবুলের শ্বশুর ও বাবুলের করা দুই মামলা তদন্তের ভার এখন পিবিআইর কাছে।