ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে তিনটা। মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার ফকিরের কোলে চড়ে মীম (৯) নামের এক শিশু আসে দোতার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে রাখা লাশের সারির কাছে নেওয়া হয় তাকে। একে একে বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, বোন রুমি ও সুমির লাশ দেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে সে।
আজ সোমবার সকালে পদ্মায় বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মীম। আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মা-বাবা আর দুই বোনের সঙ্গে সে খুলনায় যাচ্ছিল। কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বলছিল, তাদের বাড়ি খুলনায়। তারা ঢাকার মিরপুরে থাকে।
সকালে কাঁঠালবাড়ি এলাকার দেলোয়ার ফকির শিশু মীমকে উদ্ধার করে শিবচরের রয়েল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাড়ে তিনটার দিকে শিশু মীমকে আনা হয় দোতার স্কুল মাঠে। লাশ দেখালে মা, বাবা আর দুই বোনকে মৃত অবস্থায় দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান শিশু মীমকে একটি কক্ষে ফ্যানের নিচে বসান। তার বয়ান অনুযায়ীই সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে পুলিশ।
কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বলে, সাহ্রি খাওয়ার পর তারা ঢাকা থেকে শিমুলিয়ায় আসে। এরপর স্পিডবোটে ওঠে। স্পিডবোট অনেক দ্রুত চলছিল। তখন তারা তিন বোন ভয়ে কান্নাকাটি করছিল।
মীমকে উদ্ধার করা দেলোয়ার ফকির বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশুটির জ্ঞান ফেরে। এরপর সে মা-বাবা ও বোনদের খুঁজতে থাকে। তাদের জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে। একটু স্থির হলে তাকে লাশ শনাক্তের জন্য মৃতদেহ রাখার জায়গায় নেওয়া হয়।
শিবচরের ইউএনও আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের চার সদস্যের লাশ শনাক্ত করেছে মীম। ঘটনাটি এত মর্মান্তিক! মা, বাবা ও দুই বোনের লাশ এবং মীমকে খুলনায় তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।