নির্দোষ হয়েও প্রায় পাঁচ বছর কারাভোগের পর রাজধানীর পল্লবী এলাকার বেনারসি পল্লির কারিগর মো. আরমানকে আজ বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ তাঁকে মায়ের হাতে তুলে দেয়। ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়ি চলে গেছেন।
বিস্ফোরক আইনে হওয়া একটি মামলার মূল আসামির বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় আরমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ ছিল। ২০১৬ সাল থেকে তিনি কাশিমপুর কারাগার-২-এ বন্দী ছিলেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৪৫ বছর।
জেল সুপার আবদুল জলিল জানান, ২০০৫ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলায় ককটেল, দেশীয় অস্ত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম সিদ্দিকী পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিন বিহারি ও তাঁর দুই সহযোগীকে আটক করেন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শাহাবুদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০০৭ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পান শাহাবুদ্দিন। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবার জামিন নেন শাহাবুদ্দিন। এরপর তিনি ফেরারি হন।
আবদুল জলিল আরও জানান, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর ওই মামলায় শাহাবুদ্দিন ও তাঁর দুই সহযোগীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। এরপর পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে পল্লবীর ১০ নম্বর সেকশন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানকার একটি চায়ের দোকান থেকে শাহাবুদ্দিনের বাবা ইয়াছিন মহিউদ্দিনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় আরমানকে গ্রেপ্তার করেন পল্লবী থানার তখনকার এসআই রাসেল। এরপর থেকে আরমান কাশিমপুর কারাগার-২-এ বন্দী ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে আরমানকে বেআইনিভাবে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে তাঁর মা বানু হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৯ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। আরমানকে ভুলভাবে আটক করে রাখা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রায় দেন আদালত।
রায়ে আরমানকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশের চার সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরমানকে বেআইনিভাবে আটকের ঘটনায় দায় নিরূপণে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ নিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘আরমানকে মুক্তির নির্দেশ, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আইজিপিকে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জেল সুপার আবদুল জলিল আজ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে আরমানকে আজ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারাগার থেকে বের হন আরমান। কারা কর্তৃপক্ষ মায়ের হাতে তাঁকে তুলে দেন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বাড়ি নিয়ে গেছেন।