বান্দরবানের আলীকদমে বন্য হাতির আক্রমণে গতকাল শনিবার গভীর রাতে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক তরুণ। পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির পালকে চলাচলের রাস্তায় বাধা দিয়ে তাড়াতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চৈক্ষ্য ইউনিয়নের রেপারফাঁড়ি এলাকায় সাত থেকে আটটি হাতি মারাইংতং পাহাড় থেকে নেমে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকায় হাতি নেমে আসার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে লামা-আলীকদম সড়কের রেপারফাঁড়ি এলাকার শত শত মানুষ মশাল নিয়ে হাতি তাড়ানোর জন্য মাঠে নেমে যান। হাতিগুলো চলাচলের রাস্তা না পেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে মশাল হাতে মাঠে নামা লোকজনকে তাড়া করে। হাতির দল তাড়িয়ে তিন তরুণকে ধরে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ফেলে এবং পরে পদদলিত করে।
হাতির পাল চলে যাওয়ার পর এলাকাবাসী তিনজনকে উদ্ধার করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে একজনকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আরেকজন চকরিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এই দুজন হলেন ওমর আলীপাড়ার মনসুর আলম (১৮) ও মান্নান মেম্বারপাড়ার হুমায়ুন কবির (১৯)। মোহাম্মদ জুবায়ের (১৮) নামের আরেকজন লামা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, হাতির পালটি ৪ জানুয়ারি রূপসীপাড়া থেকে রেপারফাঁড়ি হয়ে মারাইংতং পাহাড়ের দিকে গিয়েছিল। যাওয়ার পথে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙেছে এবং কারও কারও মাঠের ফসল নষ্ট করেছে। গতকাল রাতে একই পথে রূপসীপাড়ার দিকে যাওয়ার জন্য মারাইংতং পাহাড় থেকে নেমে আসে। কিন্তু তাদের চলে যাওয়ার রাস্তায় এলাকাবাসী বাধা সৃষ্টি করায় হাতিরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কাইচার বলেছেন, হাতির আবাসস্থল ও চলাচলের রাস্তা দখল করে জনবসতি গড়ে উঠছে। থাকার জায়গা ও ঘোরাফেরা করার পথ না পেয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ওপর হামলা করা ছাড়া হাতির কোনো উপায় নেই। মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় সেদিকেও যেতে পারছে না। নির্মাণাধীন রেলপথের কারণে চলাচলের জায়গা আরও বেশি ছোট হয়ে গেছে।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রাকিব উদ্দিন বলেছেন, তেড়ে আসা হাতি তিন জায়গায় তিন তরুণকে ধরে ফেলে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন সামান্য আহত হয়েছেন। মারা যাওয়া দুজনের লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।