বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি এলাকায় সর্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের কালী ও মহাদেবের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় মন্দিরের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এই ঘটনা ঘটানো হয়।
এলাকাবাসী ও মন্দির কমিটির নেতারা জানান, বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের কদমবাড়ি বাজার-সংলগ্ন বটতলা সর্বজনীন কালী মন্দিরে মঙ্গলবার রাতের আঁধারে কে বা কারা মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। কালী প্রতিমার চার হাত ও মহাদেব প্রতিমার এক হাত আংশিক ভেঙে ফেলেছে। এ ছাড়া কালী প্রতিমার মাথার চূড়া ও মহাদেবের প্রতিমার গলায় প্যাঁচানো সাপের মাথা সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে।
বুধবার সকালে আহ্লাদী রানী (৬০) নামের স্থানীয় এক নারী মন্দিরে পূজা দিতে এসে কাঠের গেটের তালা খোলা এবং ভেতরে কালী ও মহাদেবের প্রতিমা ভাঙা দেখতে পেয়ে মন্দির কমিটির নেতা ও স্থানীয় লোকজনকে জানান। পরে মন্দিরে এসে সবাই এ ঘটনা দেখতে পান। তবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেননি কেউ।
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) আবু জাফর মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, বানারীপাড়া থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন, বিশারকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর গৌতম সমদ্দার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কালী প্রতিমার চার হাত ও মহাদেব প্রতিমার এক হাত আংশিক ভেঙে ফেলেছে। এ ছাড়া কালী প্রতিমার মাথার চূড়া ও মহাদেবের প্রতিমার গলায় প্যাঁচানো সাপের মাথা সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে।
মন্দিরের প্রতিমা ভাঙার খবর পেয়ে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সাংসদ মো. শাহে আলম সকালে বটতলা এলাকার ওই মন্দিরে যান। এ সময় সাংসদ মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত মন্দির কমিটির নেতাসহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।
সাংসদ শাহে আলম এ সময় বলেন, বানারীপাড়া উপজেলায় হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম ভাইবোনেরা ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে পাশাপাশি বসবাস করছেন। সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে যারা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
সাংসদ এ সময় সেখানে উপস্থিত বরিশাল জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) আবু জাফর মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ ও বানারীপাড়া থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিনকে ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দেন। সাংসদ ক্ষতিগ্রস্ত কালী, মহাদেবের প্রতিমা সংস্কারসহ ওই মন্দিরের উন্নয়নে এক লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন।
কদমবাড়ি বটতলা কালীমন্দিরের সভাপতি নিখিল বিশ্বাস বলেন, ‘কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা তা জানি না। তবে প্রশাসনের কাছে আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
বরিশাল জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) আবু জাফর মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির জনপদ বানারীপাড়াকে যারা অশান্ত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
বিকেলে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার সাহা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।