কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় গত সোমবার রাতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। একই রাতে ওই ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনার পর রোববার সন্ধ্যা থেকে কোরবানপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবারও কোনো দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। পুরো গ্রামের হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সোমবার মধ্যে রাতে কোরবানপুর গ্রামের রাবতি রানী মামলাটি করেন। এটি নিয়ে ওই ঘটনায় চারটি মামলা হলো। এসব মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গত রোববার রাতের পর কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শওকত ওসমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শওকত ওসমান মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব। এই মুহূর্তে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বলার কিছু নেই।’
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে রোববার বিকেলে পূর্ব ধইর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বনকুমার শিবের বাড়িসহ কোরবানপুর গ্রামের তিনটি বাড়ির ১৩টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় টাকাসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ।
ইউপি চেয়ারম্যান বনকুমার শিব বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এতে আমার ৫০ লাখ টাকার সম্পদ পুড়ে গেছে। দোতলা ডুপ্লেক্স ভবনের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষ পুড়ে গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
স্থানীয় লোকজন জানান, হামলার ঘটনার পর কোরবানপুর জি এম উচ্চবিদ্যালয়ের ফটক, শিববাড়ি, দেবনাথবাড়ি ও মন্দিরবাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রোববার সন্ধ্যা থেকে কোরবানপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবারও কোনো দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। পুরো গ্রামের হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শিববাড়ির বাসিন্দা ভজন শিব বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে আছি। বিভীষিকাময় সেই দৃশ্য মনে এলে এখনো ঘুমোতে পারি না।’
গত শনিবার কোরবানপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী এক ব্যক্তি ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে কোরবানপুর গ্রামের দুজন মন্তব্য করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার কোরবানপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী এক ব্যক্তি ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে কোরবানপুর গ্রামের দুজন মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মন্তব্যকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কোরবানপুর বাজারে বিক্ষোভ হয়। খবর পেয়ে রাতেই বাঙ্গরা বাজার থানার পুলিশ কোরবানপুর গ্রামের শংকর দেবনাথ (৫৪) ও আন্দিকুট গ্রামের অনিল ভৌমিককে (২১) গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। রোববার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তাঁরা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই পোস্টের জের ধরে রোববার বিকেলেই হামলার ঘটনা ঘটে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার মঙ্গলবার বলেন, ফেসবুকে ওই পোস্টে মন্তব্য করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিন্দুসম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রোববার রাতে তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যথাক্রমে ৯১, ৮৫ ও ৮৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার রাতে আরও একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।