সত্তরোর্ধ্ব মো. খলিলুর রহমান ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ঝড়-বৃষ্টির রাতেও ঘরেই ছিলেন। বাতাসে তেমন কিছু না হলেও হঠাৎ জোয়ারে তলিয়ে যায় ঘর। স্রোতের পানিতে ভেসে গেছে রান্নার জায়গা, ঘরে ধরেছে ফাটল। সেই থেকে তাঁদের রান্না-খাওয়া চলছে এক প্রতিবেশীর ঘরে।
খলিলুর রহমানের বাড়ি উল্টো দিকেই সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস-জোয়ারে বাঁধের বাইরে থাকা বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের মানুষ এখন জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে কোনো রকমে বসবাস করছে। একই অবস্থা বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকায় বসবাস করা মানুষেরও। এই দুই এলাকার ২৫৫টি পরিবারকে আজ বুধবার প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেয় বাগেরহাট বন্ধুসভা।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘ঘরে পাক করার অবস্থা এখনো নাই। পাশের বাড়ি চাইরডা রাইন্দে খাই। আগে চিড়ে, গুড় পাইছি। কিন্তু এই প্রত্থম কয়টা চাইল-ডাইল পাইলাম। কয়ডা রাইন্দে খাবানি। আল্লাহ আপনাগো ভালো করুক।’ তাঁর প্রতিবেশী আবদুল্লাহ খলিফা (৭০) বলেন, ‘মোগো ঘরটা একদম ভাইঙ্গা কাইত। কীভাবে ঠিক করব? আপনাগো এই চাইল কয়ডা ফুটায় কয়ডা দিন খাতি পাব।’
ভোলা নদীর পাড়ে মূল বাঁধের বাইরে ছোট একটি বাঁধ ছিল। তার ভেতরে বসবাস প্রায় তিন গ্রামের মানুষের। সেদিনের উঁচু জোয়ারে মূল বাঁধের বাইরে থাকা সব ঘরবাড়িই ডুবে যায়। মানুষ এখনো দিশেহারা। ভোলা নদীর পাড়ে বসবাসকারী সুরাতু নেসা চোখে দেখেন না ঠিকমতো। বুধবার দুপুরে অনেক কষ্ট করে এসেছিলেন খুড়িয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, মরিচের প্যাকেট হাতে পেয়ে চোখ ছলছল করছিল তাঁর। বলেন, ‘ছেলেরা খুলনায় থাহে, কাজ করে। আমি একটা নাতিরে লইয়ে একা থাহি। এই নিয়ে এখন চাইডা রাইন্দে খাব।’
এর আগে বাগেরহাট সদরের ভৈরব নদের তীরের মাঝিডাঙ্গা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং পাশের মুনিগঞ্জ সেতুর নিচের ১০০ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। জোয়ারে এখানকার সব বাড়ি তলিয়ে গিয়েছিল ৫-৭ ফুট পানির নিচে। খাবারের প্যাকেট পেয়ে ওই গ্রামের সাহিদা বেগম কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘দুই দিন হইছে ভাত খাই না। গতকাইলতে কয়ডা চিড়া খাইয়ে আছি। সকালেও চিড়া আর চিনি খাইছি। বউ আর ছোয়ালডারে তাগো শ্বশুরবাড়ি পাঠায় দিছি। আমি খাইয়ে না খাইয়ে পড়ে আছি। আপনাদের এই ডাইল-চাইল কয়ডা দিয়ে ফুটোয়ে খাতি পারবোনে।’