রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় পাঁচ হাজার টাকা বাকিতে ল্যাপটপ বিক্রি না করায় বন্ধুকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অপর বন্ধু। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল আমলি আদালত-২–এর বিচারক আল-আমিন ভূঁইয়ার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত মিলন রহমান (২২)।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই যুবকের নাম কনক কুমার (২৬)। তিনি ঢাকায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। নিহত কনক নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কচুয়া গ্রামের দুলাল সরকারের ছেলে। আর অভিযুক্ত মিলন রহমান বাগমারা উপজেলার মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচ মাস আগে ঢাকায় যাওয়ার পথে কনক কুমারের সঙ্গে মিলন রহমনের পরিচয় হয়। সে থেকে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মুঠোফোনে নিয়মিত দুজনের যোগাযোগ হতো। করোনাভাইরাসের কারণে কনক কুমার বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার বিষয়টি তাঁর বন্ধু মিলন রহমানকে জানান। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় কনক তাঁর ল্যাপটপ বিক্রির কথাও বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। বন্ধু মিলন নিজেই ল্যাপটপ কিনে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ জন্য কনককে গত ২৪ এপ্রিল ল্যাপটপসহ বাগমারার উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে আসতে বলেন। সে মোতাবেক কনক ওই দিন সকালে ভবানীগঞ্জ বাজারে আসেন। ভবানীগঞ্জের কলেজ মোড়ে দুজনের সাক্ষাৎ হয়। তাঁরা একটি দোকানে চা পান করেন। পরে দুজনে ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পেছনে নির্জন স্থানে যান। সেখানে উভয়ের মধ্যে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ল্যাপটপ বিক্রি নিয়ে আলোচনা হয়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, কনক কুমার ১৯ হাজার টাকায় ল্যাপটপ বিক্রির কথা জানান। তবে মিলন ১৪ হাজার টাকা দিতে চান। অবশিষ্ট পাঁচ হাজার টাকা পরে দেওয়া হবে বলে জানান। কনক বাকিতে ল্যাপটপ দিতে অস্বীকার জানালে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পাশের আমগাছ থেকে একটি ডাল ভেঙে কনকের মাথায় আঘাত করেন মিলন। এতে কনক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায় রেখে তাঁর কাছ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে ফকিন্নি নদীর ধার দিয়ে বাড়িতে চলে যান মিলন। তবে তাঁর বন্ধু মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতেন না। এরপর থেকে কোনো যোগাযোগও ছিল না। বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে মিলন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৪ এপ্রিল রাতে কনক কুমারকে অচেতন অবস্থায় বাগমারার ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশের নির্জন স্থান থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ মে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে বাগমারা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত কনক কুমারের বাবা দুলাল সরকার। মামলার পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মিলন রহমানকে ল্যাপটপসহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত কনকের বাবা দুলাল সরকার বলেন, ২৪ এপ্রিল তাঁর ছেলে বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় তাঁকে শনাক্ত করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।