টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা নেত্রকোনার জনপ্রিয় বাউলশিল্পী ইসলাম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান। আজ শনিবার দুপুরে তিনি লোক পাঠিয়ে ইসলাম উদ্দিনকে তাঁর বাড়ি থেকে এনে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি বাউলশিল্পীকে দেখতে হাসপাতালে যান।
পরে জেলা প্রশাসক ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী লিয়া খানম ও মেয়ে লিমু আক্তারের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। একই সঙ্গে ইসলাম উদ্দিনকে সরকারি খরচে একটি ঘর উপহার ও তাঁর একমাত্র সন্তান লিমু আক্তারের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে যাবতীয় সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ইসলাম উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনার খদিরপুর গ্রামে। ছাত্রজীবনে মামা রঙ্গু মিয়ার কণ্ঠে গান শুনে গানের প্রতি আসক্ত হন। এরপর প্রখ্যাত বাউল আবেদ আলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বাউলগান ও বাউলশাস্ত্রের তালিম নেন। সুমধুর কণ্ঠ ও বিশেষ গায়কির কারণে কৈশোরকালেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে বাউলগানকে বেছে নেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে। পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলে ‘মালজোড়া বাউল’ নামক জনপ্রিয় ধারাটিকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছিলেন যে কয়েকজন বাউলশিল্পী, ইসলাম উদ্দিন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৯২ সালে কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামের এক আসরে বাউলগান গেয়ে ইসলাম উদ্দিন নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের দৃষ্টি কাড়েন। পরবর্তী সময়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ওঠেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’, ‘চন্দ্র কারিগর’সহ ১৩টি নাটক, দুটি চলচিত্র (ঘেটুপুত্র কমলা ও নয়ন নম্বর বিপদ সংকেত) এবং তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্রে গান ও অভিনয় করেছেন ইসলাম উদ্দিন।
এ বাউলশিল্পী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। এরপর কিছুদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরের পরামর্শ দিলেও অর্থভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। এরপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। টাকার অভাবে তাঁর মেয়ে লিমুর পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘শরীরটা খবুই মন্দ যাচ্ছে। চলাফেরা করতে পারি না। টাকার অভাবে চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ খেতে পারছিলাম না। ডিসি স্যার আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আমি আনন্দিত। আমি সুস্থ হয়ে আবার গানের আসরে ফিরে যেতে চাই।’
হাসপাতালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এস এম মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার নারায়ণ চন্দ্র বর্মণসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ইসলাম উদ্দিন আমাদের দেশের একজন গুণী শিল্পী। টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করতে পারছেন না। জরাজীর্ণ কুটিরে খেয়ে না–খেয়ে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে হাসপাতালে এনে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সমস্ত চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করা হবে। ইসলাম উদ্দিনকে অন্যান্য সহায়তাও করা হবে।’